নেত্রকোনার কলমাকান্দা সরকারি কলেজে পুন: ভর্তির নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের ভর্তির টাকা জোগাড় করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানায়, গত ১৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে উল্লেখ, কোভিট-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিফিন, পুন: ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন, উন্নয়নের নামে কোন অর্থ আদায় করা যাবে না।
কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কলমাকান্দা সরকারি কলেজ থেকে নভেম্বরের ২০ ও ২১ তারিখ পুনঃ ভর্তির কথা শিক্ষার্থীদের জানানো হয়। পুন: ভর্তির জন্য টাকা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৫৫০ টাকা। পরে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিলে তা অনিবার্য কারণ দেখিয়ে গত ১৯ নভেম্বর পুনঃ ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এর একমাস যেতে না যেতেই নতুন করে আবারো পুনঃ ভর্তির নামে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ হাজার ৪শ’ ও ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ ১শত টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, গত ১৪ নভেম্বর একাদশ-দ্বাদশ, ডিগ্রী পাস কোর্সের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে রশিদ ছাড়া এসাইনমেন্ট বাবদ ১শ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, আমার বাবা একজন দিন মজুর। করোনা পরিস্থিতিতে খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছি। এরমধ্যে নতুন করে আবার কলেজে পুনঃ ভর্তির টাকা প্রদান করা আমাদের পক্ষে খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থী অভিভাবক আবুল বাসার জানান, কলমাকান্দা সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষে পুনঃ ভর্তি ও ডিগ্রি পাস কোর্স প্রথম বর্ষের ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষে পুনঃ ভর্তির নামে অর্থ আদায়ের বিষয়টি সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করার শামিল।
কলমাকান্দা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার চন্দ্র বণিক জানান, “আমরা সরকারি নির্দেশনার বাইরে কোন টাকা নিচ্ছিনা। আমরা নিচ্ছি শুধু বেতন অত্যাবশকীয়। অনেক কথাই আসলে বলা যায় না বলে তিনি বলেন, নিয়মের মধ্যে থেকে নেয়া যাবে যেটা সেটাই নিয়েছি। ৫০ টাকা নেয়ার নির্দেশ রয়েছে সেখানে একশ টাকা নিচ্ছি আমাদের এখানে যারা কাজ করে তাদের জন্য কাজটাজ বাবদ একটা খরচ এই। এ ছাড়া টিফিন অন্য সব না করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। আমরাও নিচ্ছি না।”
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা জানান, বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখে উদ্বোতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো: আবদুর রহমান বলেন, সরকারী নিয়মের বাইরে কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একটি পয়সাও নেয়া যাবে না। যদি কেউ এধরণের কাজ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে নেত্রকোনা ১ আসনের (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) সংসদ সদস্য মানু মজুমদার জানান, কয়েকজন অভিভাবক বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। আমি কলেজ কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কাগজপত্র দেখাতে বলেছি। কলেজটি আগে বেসরকারী ছিল, এখন সরকারী হওয়ায় তারা আগের নিয়মে কাজ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।