ছত্রাকনাশক ‘এন্ট্রাকল’ ওষুধ স্প্রে করার পর রাজশাহীর তানোর উপজেলায় অন্তত এক হাজার বিঘা জমির আলু ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত আলুচাষির সংখ্যা প্রায় ৫৫ জন। এসব চাষিদের বাড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। রোপিত আলু ক্ষেত নষ্ট হয়ে পড়ায় তারা এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, ক্ষেতে আলু রোপণের ১৫ দিন পর কেবল গাছ গজাই। এতে রোগ বালাই দেখা দেয়। এসব রোগ বালাই বা ছত্রাক ঠেকাতে তারা বেয়ার ক্রপসায়েন্স কোম্পানীর ‘এন্ট্রাকল’ নামের একটি ওষুধ স্প্রে করেছিলেন। এরপরই তাদের আলুগাছ হলদে হয়ে মরে যেতে শুরু করে। অনেকের গজানো আলু ক্ষেত মরে একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এর কোন সমাধান দিতে পারছেন না।
তানোরের চাষিরা উপজেলা সদরের ‘মেসার্স সৈয়ব আলী ট্রেডাসর্’ থেকে ‘এন্ট্রাকল’ নামের বালাই বা ছত্রাকনাশক ওষুধ কিনেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সৈয়ব আলী ওই ওষুধ কোম্পানি তানোরের প্রধান পরিবেশক। গত ১৯ (ডিসেম্বর) শনিবার রাতে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন চাষি তার কাছে ছুটে আসেন। পরদিন সকালে তারা সৈয়ব আলীর ছেলে মিলনকে নিয়ে আলুর ক্ষেত পরিদর্শন করে সন্ধ্যার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ক্ষতিপূরণ চেয়ে অভিযোগ করেন। সেখানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও থানার ওসিসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও তাদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু অভিযোগের এক সপ্তা পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে, হতাশায় পড়েছেন চাষিরা।
উপজেলা সদরে সিন্দুকাই গ্রামের কৃষক ওবাইদুর রহমান বলেন, এ বছর তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। সব ধরনের ছত্রাক আর মোড়ক থেকে আলুগাছ রক্ষার জন্য শুক্রবার তিনি ‘এন্ট্রাকল’ ওষুধ ক্ষেতে স্প্রে করেন। গত শনিবার সকালে জমিতে গিয়ে দেখেন সব আলুগাছ পুড়ে মরে গেছে।
তানোর পৌর এলাকার ভাতরন্ড গ্রামের আজাহার ও তানোর গ্রামের আসমত আলী বলেন, তারা চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তাদেরও একই অবস্থা। তারা বলেন, তাদের এলাকার ৫০ থেকে ৬০ জন আলু চাষির অন্তত এক হাজার বিঘা আলুর ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তারা এখন ক্ষতিপূরণ চান।
ওষুধটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘বেয়ার ক্রপসায়েন্স লিমিটেড’ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে, প্রতিষ্ঠানটির তানোরের পরিবেশক সৈয়ব আলী বা তার ছেলে মিলনও কোন কথা বলতে চাননি। ফোন ধরেননি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তানোর থানার কর্মকর্তা ইনর্চাজ (ওসি) রাকিবুল হাসান বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। যদি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের কেউ অভিযোগ দেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এনিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, উপজেলার প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা যেন সঠিকভাবে তাদের ক্ষতিপূরণ পান সে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।