দাপ্তরিক জটিলতার কারণে গত ১৩ দিন ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে এক ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ পড়ে আছে। তার নাম কাদির শেখ। মরদেহ ফেরত পেতে কাদির শেখের পরিবার ভারতের একটি মানবাধিকার সংস্থাসহ দেশটির স্বরাষ্ট্র ও বিদেশ মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়েছেন। মৃত্যুর ১৩দিন পরও কাদির শেখের মরদেহ ফেরত না পাওয়ায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছেন কাদির শেখের পরিবার। আর দ্রুতসময়ের মধ্যে মরদেহটি হস্তান্তরের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মৃত কাদির শেখ পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার কালিয়াচক থানার চকমাইলপুর সীমান্ত গ্রামের বাসিন্দা। এলাকাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী জমিনপুর গ্রামের বিপরীতে সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের মালদা জজ আদালতের মানবাধিকার আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় দাস গত শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনের মাধ্যমে কাদির শেখের মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়ার বিষয়ে তাদের পরিবারকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না পাওয়ায় মরদেহ আটকে রয়েছে। এতে ভুক্তভোগী পরিবারের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ র্যাবের একটি দল ভারতীয় নাগরিক ৭০ বছরের কাদির শেখ ও তার স্ত্রী আলেকনুর বিবিকে (৬৫) চারটি পিস্তল ও ২৭টি গুলিসহ জমিনপুর সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল তারা অস্ত্র ব্যবসায়ী। তখন থেকেই ভারতীয় এই দম্পতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দী ছিলেন। এক বছর পর কাদির শেখের স্ত্রী আলেকনুর বিবি জামিনে মুক্ত হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কালিয়াচক থানার চকমাইল গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে যান। তবে মামলাটি আদালতে চলমান থাকায় কাদির শেখের জামিন হয়নি।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার ইসমাইল হোসেন জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামলাটির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কাদির শেখ ও তার স্ত্রী আলেকনুর বিবিকে বেকসুর খালাস প্রদান করে রায় দেন। তবে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চিঠি চালাচালির পরও প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় কাদির শেখ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারেই বন্দী ছিলেন। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ তথ্য নিশ্চিত করে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, কাদির শেখ অসুস্থ হয়ে পড়লে চলতি মাসের প্রথম দিকে আমাদের তত্বাবধায়নে চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার। পরে তার শারীরীক পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের প্রিজন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে কাদির শেখ মৃত্যুবরণ করেন। তার মরদেহ ভারতে পাঠানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহনের জন্য পরদিনই কারা অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত অনুমতি না আসায় কাদির শেখের মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে মেডিকেল কলেজের মর্গেই রাখা হয়েছে। এ বিষয়টিও ভারতীয় হাইকমিশনকে জানানো হয়েছে।