বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ও সর্বজনপূজ্য মহাসাধক বৌদ্ধ আর্য্যপুরুষ ভদন্ত শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ১০২তম জন্মোৎসব উৎসব পালন করা হয়েছে। জন্মোৎসব ঘিরে শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) সকালে রাঙ্গামাটির বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান বৌদ্ধ তীর্থস্থান রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার, রতœাংকুর বনবিহার, যুমচুগ বনাশ্রম বনভাবনা কেন্দ্র, ধনপাতা সাধনা বনবিহার, গর্জনতলী পাড়া শাক্যমণি বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন শাখা বনবিহারে পৃথক পৃথক ভাবে পালিত হয়েছে মহাসাধকের জন্মোৎসব।
বৃহস্পতিবার থেকে দূর-দূরান্ত থেকে রাজবন বিহারে অগণিত পুণ্যার্থীর ঢল নামে। ভক্তকুলের শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়, সর্বজনপূজ্য বনভান্তের নিস্প্রাণ পেটিকাবদ্ধ দেহ ধাতু।
রাত ১২টা ১মিনিটে বনভান্তের পেটিকাবদ্ধ দেহ ধাতুতে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে ভোর ৬টায় রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার দেশনালয়ে সর্বজনপূজ্য বনভান্তের ১০২তম জন্মোৎসবের কেক কাটেন শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের প্রধান শিষ্য ও রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এ সময় বনভান্তের অন্যান্য শিষ্যরা উপস্থিত ছিলেন। কেক কাটা অনুষ্ঠানে যোগ দেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। নানা রঙে তৈরি তোরণ ও বেলুনে সাজানো হয় গোটা রাজবন বিহার এলাকা।
ভোরে পরে বৌদ্ধ পতাকা উত্তোলন, পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধপূজা, ত্রিপিটক পূজা, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, প্রদীপ পূজা ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ধর্মীয় সভা। অনুষ্ঠানে পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন ৬নং বালুখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমা। বিশেষ প্রার্থনা পাঠ করেন বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমীয় খীসা।
বনভান্তের অমৃতময় বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে পুণ্যার্থীদের মাঝে ধর্মদেশনা দেন, রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষু প্রধান ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ভদন্ত শ্রীমৎ জিনবোধি মহাস্থবির, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ শাসন রক্ষিত মহাস্থবিরসহ অন্যান্য বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।
পুণ্যার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, সদস্য সবির কুমার চাকমা, ইলিপন চাকমা প্রমুখ।
পৃথক পৃথক ধর্মীয় সভায় পৃথিবীর সব প্রাণীর সুখ ও মঙ্গল এবং দেশ ও বিশ্বের শান্তি কামনা করা হয়। এ সময় গৌতম বুদ্ধ এবং বনভান্তের নির্দেশিত জীবনাচার পালন এবং হিংসা-দ্বেষ, লোভ-মোহ পরিত্যাগ করে মঙ্গলময় পথে চলতে সবার প্রতি আহ্বান জানানোসহ পার্বত্য এলাকার শান্তি যেনো অব্যাহত থাকে সে মনবাসনা মহান বুদ্ধের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যায় হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস বাতি উড়িয়ে শেষ হয় বনভান্তের ১০২তম জন্মোৎসব।
উল্লেখ্য, বৌদ্ধধর্মীয় এ মহাসাধকের জন্ম ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি সদরের ১১৫ নম্বর মগবান মৌজার মোড়ঘোনা নামক গ্রামের এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে। তিনি মহামতি গৌতম বুদ্ধের পথ অনুসরণ করে ১৯৪৯ সালে গৃহত্যাগ করেছিলেন। যার পথ ধরে মহাপরিনির্বাণ লাভের মধ্য দিয়ে দেহত্যাগ করেন, ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি। জীবদ্দশায় আমরণ ছিলেন, রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে। বর্তমানে বনভান্তের মরদেহটি বিজ্ঞান ও বিনয়সম্মতভাবে পেটিকাবদ্ধ (বিশেষ কফিন) অবস্থায় রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে রাখা আছে।