আওয়ামী লীগ যদি সরকারে না থাকতো, বোধকরি চারণ কবি এই সমাবেশ এর আয়োজন করতে পারতো না। কারণ বিভিন্ন প্রকার অপশক্তি যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিথ্যা অপপ্রচার দিয়ে আমাদের অগ্রগতিকে রোধ করাবার চেষ্টা করে, এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর কথা বলে, তারা কখনও চায় না এধরনের কোন আয়োজন হউক।
১৯৭২ সালে পাকিস্তানি কারাগার থেকে ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ দিনে তাঁর প্রিয় মাটিতে তিনি পা রেখেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন। আজকের যে বাংলাদেশের অগ্রতি তা জাপানের প্রধানমন্ত্রী এসে অবাক হোন। অমর্ত্য সেন মন্তব্য করতে এসে বলেন আগামী ১০ বছরের মধ্যে এবং আগামী ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জ করবে। আমাদের জাপানের প্রধানমন্ত্রী এসে বিস্ময়ে বিস্মিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনার হাতে কি কোন চেরাগ আছে, যে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আপনার দেশকে আপনি এভাবে পাল্টে দিয়েছেন! এ উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে কথাটি তিনি বলেন সেটি হচ্ছে এই পরিকল্পনা চিন্তা কোনটি আমার না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি যে পথ নিদর্শন করেছেন, আমার কেবলমাত্র সে পথেই চলা। কাজেই উনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে আমরা যে উন্নত অর্থনীতির দেশের কথা বলছি, ক্ষুধা মুক্ত দেশের কথা বলছি, একটা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা বলছি, একটা নিরক্ষরমুক্ত বাংলার কথা বলছি, সে বাংলা অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হতো। সে মহান নেতা তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন এদিনে। যে কথাটি আমি বলছিলাম, আজকের এ অগ্রগতিকে রোধ করবার জন্য একটি শ্রেণি বারবার অপব্যাখ্যা দেয়। ৫৪ সালে যখন আমরা যুক্তফ্রন্টে নির্বাচন করি তখন নৌকায় ভোট দিলে বিবি তালাক হয়ে যাবে বলা হলো! ৭১ সালে বলা হলো যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা, তারা সব জারয সন্তান। এমন কথাও বলা হলো, এটা মুক্তিযুদ্ধ না, এটা ইন্ডিয়ান দালালদের একটা তান্ডব এবং এতকিছু করার পরও আমার মুক্তি পাগল বাঙালিকে কোনভাবে স্তিমিত করা যায়নি। ৩০ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, একটি ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তমত প্রকাশের বাংলাদেশ, নিরক্ষর মুক্ত এমন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য রক্ত দিলো। আমারা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করলাম। আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তীতে যখন পদার্পণ করছি, আমরা মুজিব জন্মশতবার্ষিকী যখন উদযাপন করছি, সে সময়ও আমাদের কষ্ট হয়, বিভিন্ন প্রকার ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামকে সামনে হাজির করে, তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত হানার দুঃসাহস পেয়েছেন। এই দুসাহসও তারা দেখিয়েছেন, এমন কথা তারা বলেন যে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেবো এবং ধর্মকে ব্যবহার করে অপধর্ম তারা প্রচার করবার চেষ্টা করেন। ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মকে কুলষিত করবার চেষ্টা করেন এই সাম্প্রদায়িক শক্তি। যাদের উত্থান ইতোমধ্যে হয়েছে তা না, এই শক্তি ছিল, এরা বারবার পরাস্ত হয়, এখনও তারা ভ্রান্ত কথা বলছে। এদের পরাজয় নিশ্চিত হবে, ইতিহাস যদি সত্য হয় এরা কখনও টিকবে না।
আজকে এই সঙ্গীত, লালন শিল্পি, এর আগে লালন আখড়ায় হামলা করা হলো। লালন আখড়ায় হামলা করে তারা বাউল শিল্পিকে হত্যা করলো। কারণটি হলো তারা অ-ইসলামিক কর্মকা-ে লিপ্ত। পবিত্র কোরআনের কোথাও কোন স্থানে কি লিখা আছে- সঙ্গীত হারাম, ভাস্কর্য হারাম? ভাস্কর্য এবং প্রতীমা বা মূর্তী এক জিনিস না। ভাস্কর্য হচ্ছে একটি দেশের ঐতিহ্য, একটি দেশের সাহিত্য। একটা ভাস্কর্য কোথাও পেলে এটা নিয়ে গবেষণা করা হয়। আমাদের ঐতিহ্যকে, আমাদের সাহিত্যকে, আমাদের ইতিহাসকে আমরা ম্লান করে দেই। আমাদের এটা রুখতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার নামে অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।
রোববার রাতে বিরলের ধর্মপুর ইউপি’র কালিয়াগঞ্জ শালবনে বাংলাদেশ জাতীয় চারণ কবি সংঘের আয়োজনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২ দিন ব্যাপী আয়োজিত আলোচনা সভা এবং মা-মাটির টানে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন।
২ দিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানে প্রথম দিন রোববার সকাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় চারণ কবি সংঘের সদস্যগণের রেজিষ্ট্রেশন, উন্মুক্ত পরিবেশনা, ভূরী ভোজ অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল হতে হতেই ধর্মপুর ইউপি’র কালিয়াগঞ্জ শালবনে দেশবরেণ্য কবি, বাউল ও শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠানস্থল মুখরীত হয়ে উঠে হাজার হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে। সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল।
বাংলাদেশ জাতীয় চারণ কবি সংঘের সভাপতি এম এ কুদ্দুস সরকার এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর সরকারি কলেজ এর বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মাসুদুল হাসান, বাংলাদেশ জাতীয় বাউল সমিতির চেয়ারম্যান দেওয়ান আবদুল লতিফ সরকার, থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ শেখ নাসিম হাবিব, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল কাদের, জগতপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ তৌহিদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক বিভূতি ভূষণ সরকার, ধর্মপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান সাবুল চন্দ্র সরকার, রাণীপুকুর ইউপি’র চেয়ারম্যান ফারুক আজম, পলাশবাড়ী ইউপি’র চেয়ারম্যান আবদুস শুকুর প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ধর্মপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রতন চন্দ্র সরকার। পরে রাতব্যাপী মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা পরিবেশিত হয়।
সোমবার দ্বিতীয় দিনে একইস্থানে দিনব্যাপী কবি ও বাউল গানের পরিবেশনা শেষে রাতে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হবে।
উত্তরাঞ্চল এবং ঢাকাসহ দেশের অনেক শিল্পীদের সমাবেশ ও কয়েক হাজার মানুষের সমাবেশের আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় চারণ কবি সংঘের সভাপতি ও অনুষ্ঠানের আয়োজক এম এ কুদ্দুস সরকারকে প্রধান অতিথি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।