রাজশাহীর পুঠিয়া ও চারঘাট দুই উপজেলায় কৃষকদের প্রণোদনার টাকা দিয়ে কৃষি অফিস মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের পেঁয়াজ বীজ কিনে কৃষকের মাঝে বিতরণ করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ বীজের চারা না গজানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে করে সরকারের পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র অজিত হবে না এবং কৃষকরা পেঁয়াজের আবাদ হতে বঞ্চিত ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হবে।
চারঘাট উপজেলা কৃষি অফিস চলতি বছরে সকারের প্রণোদনার টাকায় ২৫০জন কৃষকদের মাঝে ৭৫০ গ্রাম করে পেঁয়াজের বীজ বিতরন করে। ১৮৭ কেজি বীজ কেনা হয়ে ছিল এসিআই কোম্পানির মাধ্যমে। যার সরকারি বাজার মূল্যে খাতাকলমে ধরা হয়েছে কেজি প্রতি ৬ হাজার টাকা করে। সে অনুযায়ী ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের চারঘাট উপজেলা কৃষি অফিস বীজ কিনেছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের পেঁয়াজ বীজ কিনেছে কেজি প্রতি মাত্র ৩ হাজার ৫শত টাকা করে। চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের চামটার বিলে এসকে বাদাল গ্রামের কৃষক আকবর আলি, নেজাম উদ্দিন অন্য জমি ইজারা নিয়ে প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজতালায় রোপণ করে ছিল কিন্তু একটি বীজও তাদের গজায়নি। শলুয়া ইউনিয়নের ৩০ জন চাষীকে চারঘাট কৃষি অফিস হতে যে প্রণোদনার বীজ দেয়া হয়েছে তাদের কাউরে বীজে চারা গজায়নি। শুধুমাত্র নিম্নমানের বীজের কারণে ২৫০ জন কৃষকের কোনো প্রকার পেঁয়াজের বীজ গজায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কৃষকরা এজন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষকরা বলছেন, সরকারি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে এসব নিম্নমানের বীজ কিনে কৃষকদের বিতরণ করেছে। এতে করে কৃষকরা পেঁয়াজের আবাদ হতে বঞ্চিত এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হলো। আবার সরকারের অর্থের অপচয় হলো।
অপরদিকে চলতি বছরে পুঠিয়া উপজেলায় ৪ হাজার ৩শত ৫০ হেক্টোর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষমাত্র রয়েছে। প্রণোদনার টাকা দিয়ে কৃষি অফিস প্রান্তিক কৃষকদে মাঝে বিনা মূল্যে পেঁয়াজের বীজ, প্রথম পর্যায়ে ৫শত ২০ জনকে ২৫০ গ্রাম করে, দি¦তীয় পর্যায়ে ৬শত জনকে ৭৫০ গ্রাম করে পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করেন। শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের আবদুল গনি নামের কৃষক বলেন,পুঠিয়া উপজেলায় বাংলাদেশের অতি সুনামধন্য তাহেপুরি জাতের পেঁয়াজের ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। কৃষি অফিস থেকে যেসব বীজ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে শতকরা ষাটভাগ বীজের চারা গজায়েছে। বাকি চল্লিশভাগ চারা গজায়নি। হয়তো বা নিম্নমানের বীজের কারণে চারা না গজানোর কথা। কারণ যেসব কৃষকরা প্রণোদনার টাকা বীজ বোপন করেছে, তাদের বেশিরভাগ চারা গজায়নি। কিন্তু পাশাপাশি যারা খোলাবাজার হতে পেঁয়াজ বীজ কিনেছে। তাদের বীজ শতকরা হার বেশি রয়েছে। কৃষকরা কষ্ট করে জমি তৈরি করেছে। কিন্তু সঠিক পরিমাণ পেঁয়াজ চারা না গজানোর ফলে কৃষকরা পেঁয়াজের আবাদ করতে পাচ্ছে না। ভালুকগাছি ইউনিয়ন এলাকার কৃষক ছলিম উদ্দিন বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে যেসব বীজ কৃষকদের দেয়া হয়েছে, কৃষকদের আশায় ছিল, বীজের চারা গজালে পেঁয়াজের আবাদ করবে। চারা না গজানোয় ক্ষতির শিকার হয়ে পড়লো। এতে করে সরকারের পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র অজিত হবে না। মঙ্গলবার সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে যানা গেছে, উপজেলার একজন উচুমাপের কর্মকর্তা এবং কৃষি কর্মকর্তা মিলে ¯থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষতি পুরণ করে দেয়ার হবে বলে ঘোষণা করেছেন। বিশাল পরিমাণ প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজের চানা না গজানো জন্য এ বছর চারার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ১ মন পেঁয়াজের চারা দর ৩ হাজার ৫শত টাকা হতে ৪ হাজার ৫শত টাকা পর্যন্ত। কৃষকরা বলছে, এত চারার দাম থাকলে কৃষকরা পেঁয়াজ চাষ করবে না। এসিআই কো¤পানির মাকের্টিং কর্মকর্তা রাকিব বাসার বলেন, আমাদের কো¤পানির নিকট হতে পেঁয়াজ বীজ চারঘাট কৃষি অফিস কিনেনি। তবে আমার মাধ্যমে নাটোরের এক বীজের দোকান হতে বীজ কিনেছেন। যখন কৃষি অফিস আমাকে চাহিদা দিয়ে ছিল। তখন আমাদের নিকট ভালো বীজ ছিল না।
চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, পেঁয়াজের বীজ সম্পন্ন গজায়নি এটা ঠিক না। আমি এসিআই কোম্পানির মাধ্যমে বীজ কিনেছি। তাদের আমি এখনো বীজের টাকা পরিশোধ করিনি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আমরা সহযোগিতা করব। তিনি সংবাদটি না ছাপানো জন্য এই প্রতিবেদকে অনুরোধ করেছেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক শামছুল হক এফএনএসকে বলেন,আমি সব এলাকায় ঘুরে দেখেছি। বীজ না গজানোর অভিযোগ পায়নি। চারঘাট উপজেলা পেঁয়াজ বীজ না গজানোর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়ে তিনি বলেন, চারঘাটে অন্য একজন গিয়ে ছিল। তারপর এবছর বেশি ঠান্ডার কারণে বীজ না গজাতে পারে।