রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আ.লীগের নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের পথসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীসহ তার লোকজন হামলা চালিয়ে শতাধিক দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। তারপর থেকে আড়ানী পৌর বাজারের প্রায় ১ হাজার দোকান বন্ধ রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১৪ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আড়ানী পৌর বাজারের তালতলা মোড়ে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা চলছে।
তবে এই ঘটনায় মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০/৬০০ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে।
জানা যায়, উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আ.লীগের নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ গণসংযোগ শেষে আড়ানী বাজারের তালতলায় পথসভায় করছিল। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলী ও তার সমর্থকরা ১৫/২০ জন অতর্কীভাবে হামলা চালায়। পরে তারা মসজিদের মাইকেল লোকজনকে ডেকে মুক্তার আলীসহ তার দল নিয়ে নৌকার প্রার্থীর দুটি অফিস ভাংচুর, ৫টি মোটরসাইকেল, শতাধিক দোকান ভাংচর করে লুটপাট করে নিয়ে যায়। দফায় দফায় গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়।
্এই ঘটনায় আহত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের সমর্থক তুষার আহমেদ, সোহান আহমেদ, ইসলাম উদ্দিন, লাটু হোসেন, ইফসুফ আলী, সাবাজ আলীসহ প্রায় ২৫ জন। এরমধ্যে স্থানীয়ভাবে, পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রে ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তুষার আহম্দে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহীদের ভাগ্নে। সোহান আলীকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এই ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় নৌকার সমর্থক ফাকরুক হোসেন নামের এক কর্মীকে মুক্তার নিজে ও তার লোকজন মারপিটের ঘটনায় আবারও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত পৌরসভায় তালতলা এলাকার উওর দিকে আ.লীগের প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের সমর্থকেরা ও দক্ষিন দিকে বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র মুক্তার আলীর সমর্থকেরা সশস্ত্র অবস্থায় হাসুয়া, লাঠি, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, বাঁশের লাঠি নিয়ে অবস্থান করছেন। এলাকায় বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আবারও রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ বলেন, আমার নির্বাচনী গণসংযোগ শেষে কাটাখালি পৌর সভার মেয়র আব্বাস আলী তালতলায় বক্তব্য দিয়ে চলে যাওয়ার পর মুক্তার আলীসহ তাল লোকজন হামলা চালায় এবং গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি বোমা উদ্ধার করেছে।
তিনি আরো বলেণ, পথসভায় প্রায় শেষ মুহূর্তে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন সশস্ত্র সমর্থক আকস্মিক হামলা চালান। এ সময় মুক্তার আলীসহ তার সমর্থকরা গুলিবর্ষণ শুরু করেন এবং বোমা হামলা চালান। প্রাণের ভয়ে এ সময় আমার সমর্থকরা ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে শতাধিক দোকানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে নিয়ে যায়।
এদিকে, গত ৮ জানুয়ারি দুপুরে আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মুক্তারের সমর্থকরা মাছরাঙা টেলিভিশন রাজশাহীর ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল এবং দীপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন রফিকুল ইসলামের ওপর হামলা চালায়।
উল্লেখ্য, মুক্তার বর্তমানে আড়ানী পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বদ্বতা করছেন। এ কারণে তাকে আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অপসারণ এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আড়ানী পৌর আ.লীগের সভাপতি শাহীদুজ্জামান শাহীদ। তবে মুক্তার আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন বর্তশানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই ঘটনায় নৌকার নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন মতি বাদি হয়ে মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে ৫০ জনে নাম উল্লেখ করে ৫০০/৬০০ জনের নামে মামলা বিস্ফোরণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় মিলন নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।