অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক ও সিবিএ নেতা সৈয়দ নাসির উদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই চার্জশিট দাখিল করবে দুর্নীতির দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগপত্রের সাথে যোগ হতে পারে নাসির উদ্দীনের স্ত্রীর নাম। নাসির দম্পতির অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা।তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক একাউন্টে প্রায় ৫০ লাখ টাকা জমা আছে বলে তদন্তে তথ্য পেয়েছে ইনভিষ্ট্রিগেশন কর্মকর্তা। মঙ্গলবার কমিশনের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন,অভিযোগটি এখনও তদন্তাধিন রয়েছে। তদন্ত স্বার্থে এখন কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে চলতি মাসেই তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে পারে। এমাসের শেষের দিকে চাজর্শিট আদালতে জমা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত বছর ২৬ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে অভিযোগে মামলা করেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়,তিতাসের সিবিএ নেতা নাসির উদ্দিন সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৪০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন। এ ছাড়া তার আয় ও ব্যয়ের সাথে স্থাবর ও অস্থাবর মোট ৮০ লাখ ২৯ হাজার টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে, তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়। সব মিলিয়ে সৈয়দ নাসির উদ্দিন এক কোটি ৯৭ লাখ টাকার বেশি স্থাবর- অস্থাবর অবৈধ সম্পদ গড়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। ২০১৯ সালের ৬ মে দুদকের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে নাসির উদ্দিনের দাখিলকরা সম্পদ বিবরণীতে তিনি ১৭ লাখ ৫৫ হাজার ৬২৩ টাকার স্থাবর ও ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে মোট ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৬২৩ টাকার সম্পদ রয়েছে বলে দেখানো হয়।
অবৈধ সম্পদের মধ্যে নাসির উদ্দিনের নামে আইএফআইসি ব্যাংকের মিরপুর শাখায় এফডিআর হিসাবে ১ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। যার হিসাব নম্বর -১০১০৩৮১০৬০২০১ ও ১০১৩৩৮১০৬০২০২। এ ছাড়া একই ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব ও তার প্রতিষ্ঠান সৈয়দ এন্টারপ্রাইজের হিসাবে ৮২ হাজার ৭৬৩ টাকা পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এক কোটি ৮২ হাজার ৭৬৩ টাকার সন্ধান মিলেছে দুদকের অনুসন্ধানে। যা তিনি তার সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেননি বা তথ্য গোপন করেছেন। নাসির উদ্দিনের সম্পদ বিবরণী ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র সূত্রে জানা যায়, নাসির উদ্দিন ও তার ভাই সিবিএ নেতা সৈয়দ আয়েজ উদ্দিন যৌথভাবে ঢাকা জেলার রূপনগর থানার আরামবাগ হাউজিংয়ে (প্লট নং -১৬, ব্লক # সি) ৩.৬৩ কাঠা জমির ওপর ২ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দুদকের দাখিলকরা সম্পদ বিবরণীতে তিনি নির্মাণ বাবদ নাসির উদ্দিনের অংশে ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ১২৩ টাকা বিনিয়োগ দেখান। কিন্তু গণপূর্তের বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক যাচাইকালে দেখা যায় বাড়ি নির্মাণে মোট ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। সে হিসেবে নাসির উদ্দিনের ২২ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। অর্থ্যাৎ তিনি ৮ লাখ ১৮ হাজার ৩৭৭ টাকার খরচ কম দেখিয়েছেন।
এছাড়া সম্পদ বিবরণী উল্লেখ করা ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্রের মূল্যে যথাক্রমে ৩ লাখ ৮৩ হাজার এবং ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকার তথ্য গোপন করেছেন বলে রেকর্ডপত্র ও বিশেষজ্ঞ মতামতে উঠে এসেছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের সিবিএ’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী ব্যবস্থাপক সৈয়দ নাসির উদ্দিন ও তার ভাই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আয়াজ উদ্দিনকে ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অস্বীকার করেন নাসির উদ্দিন। ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দেওয়া, বাইপাস লাইন দেওয়া, মিটার টেম্পারিংসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।