মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি প্রতিটি ঘরহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলেও কনকনে এই শীতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অসহায় হতদরিদ্র বৃদ্ধ দম্পতি জহির উদ্দিন (৯৬) ও হালিমা বেগম (৬৩)। যাদের নিজেদের থাকার মত একটি ভাল ঘর নেই, বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে জরাজীর্ণ একটি টিনের চালায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। সংসারের লাগামহীন নানা বোঝা টানতে টানতে এখন ক্লান্ত, সময়ের পরিক্রমায় হয়ে পড়েন অক্ষম, শক্তিহীন এই দম্পতি।
সেই দিনের তরতাজা জীবন দুটি আজ বয়সের ভারে একেবারে নুয়ে পড়েে গেছে। তাদেরে নেই থাকার মত একটি ভাল ঘর। দুই ছেলে ও তিন মেয়ে থাকার পরেও ভাঙ্গা একটি টিনের চালায় মানবেতর জীবনযাপন কাটছে তাদের। বাস্তভিটা ৪ শতক ছিল সেটাও ছেলেদের নামে দিয়েছেন। এক কথায় ভালো নেই এই বৃদ্ধ দম্পতি।
তাদের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের জেলেপাড়া গ্রামে। মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে জহির উদ্দিন নামের বছরের বৃদ্ধ ও বছরের হালিমা নামের এক দম্পতি।
বৃদ্ধ এই দম্পতিদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তেমন একটা খোঁজখবর রাখছেন না কেউই। তবে দুই ছেলে থাকলেও তারাও এখন বিয়ে করে বৃদ্ধ বাবা মায়ের থেকে আলাদা। তারাও দিন কাটাচ্ছেন অনেক কষ্টে।
শনিবার (২৩ জানুয়ারী) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কনকনে শীত আর ঠান্ডা বাতাসে ভাঙ্গা টিনের চালায় ৬৮ বছরের বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এই কনকনে শীতে কেউ দেয়নি তাদের একটি কম্বল। তাদের দুই ছেলে, বড় ছেলের নাম হালিম পেশায় “জেলে'। সে তিস্তা নদীতে মাছ ধরে কোন রকম তার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কোন রকমে জিবিকা নির্বাহ করে। ছোট ছেলে ঢাকায় থাকেন। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে সরকারের দেয়া দু'জনের বয়স্কভাতার টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার।
অশ্রুশিক্ত চোখে বৃদ্ধ দম্পতিরা বলেন, ভোটের সময় ভোট চাইতে আসে মেম্বার চেয়ারম্যানরা। ভোট হয়ে গেলে কেউ আর আসে না। একটি ঘরের জন্য চেয়ারম্যান কে বহুবার বলেছি তিনি কোন গুরুত্ব দেয়নি।
আমাদের চেয়ে যারা খুব ভাল চলে তারা পায় সরকারী ঘর অথচ আমাদের ভাগ্যে জোটেনি একটি সরকারী ঘর। নিজের জায়গা জমি যা ছিলো সবশেষ। বাস্তভিটা ৪ শতক ছিল সেটাও ছেলেদের নামে দিয়ে দিয়েছেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন, কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলহাজ¦ নুরুজ্জামান আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট একটি সরকারি ঘরের জন্য আকুতি জানান এই দম্পতিরা।
স্থানীয়রা জানায়, অসহায় ওই বৃদ্ধ দম্পতির ভাল একটি ঘর নেই। থাকেন টিনের চালায়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ওই দম্পতির জন্য একটি সরকারী ঘর পাওয়া উচিৎ বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয় কাকিনা ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল হক শহীদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “আমার সাথে জহির উদ্দিন ঘরের বিষয় কোন কথা বলেনি। তবে ওই জহির উদ্দিন একটি সরকারী ঘর পাওয়া যোগ্য ছিল।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সামিউল আমিন জানান, আমাদেরকে জানানো হয়েছিল ওই বৃদ্ধ দম্পতির নিজের জমিতেই বাড়ি আছে। তাই গৃহহীন পরিবারের তালিকায় তার নাম রাখা হয়নি। আপনাদের নিকট যেহেতু জানতে পারলাম তারা অন্যের জমিতে টিনের চালা পেতে আছে তাই সরেজমিন তদন্ত করে তাদের জন্য ঘর বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।