জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লংঘন করে নির্বিঘেœ উর্ব্বর ফসলি কৃষি জমি নষ্ট করে ব্যাপক হারে পুকুর খননের নামে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী ভুমি মালিক, স্কেভেটর ঠিকাদার। বিভিন্ন মহলে মোটা অংকের মাশুহারা দিয়ে কৃষিজমিতে পুকুর খনন ও পুকুর সংস্কারের নামে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখাযায়, অপরিকল্পিত ভাবে কৃষি জমি ভরাট, পুকুর খনন, পুরাতন পুকুরের তলদেশ থেকে ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর করে বালু উত্তোলন করছে। নষ্ট হচ্ছে পিচঢালা রাস্তা ও ফসলি কৃষি জমি ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসন যেন কিছুই দেখছে না।
প্রকাশ্যে দিনরাত ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার পর তা পরিবহনের জন্য পাকা ও কাঁচা সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটি বোঝাই ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তা গুলো ভেঙ্গে গিয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। আর সড়কগুলো নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ। ওই সব মাটি যাচ্ছে বাড়ী নির্মান কাজে জমি ভরাট এবং বালু যাচ্ছে রাস্তা ও স্থাপনা তৈরীতে।
মাহমুদুল হাসান চৌধুরী বলেন, মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে পুকুর খননে। ফলে পাল্লা দিয়ে ক্ষেতলারের প্রতিটি গ্রামেই আবাদি জমি, বসতবাড়ির পাশে পুকুর কাটা চলছে।
উপজেলার মিনিগাড়ী গ্রামের শহিদুল ইসলাম তার তিন বিঘা জমিতে নতুন পুকুর খনন করছে। এই পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়ীর পাশে জমি হওয়ায় ফসল ভালো হয় না। বর্তমান মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় পুকুর খনন করছি। ফসলি জমিতে পুকুর খনন করার জন্য ভূমি অফিসের কোন অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে, তিনি বলেন ভূমি অফিসে গিয়েছিলাম তারা কোন অনুমতি দেননি তবে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করছি।
মেসি মালিক ও স্কেভেটর ঠিকাদার জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমান এ উপজেলাতে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ টি স্কেভেটর (ভেকু) এবং প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টি মেসি চলছে। সবাইকে ম্যানেজ করে আমরা এসব চালাচ্ছি। সাংবাদিকদের বুঝা উচিত আমরা গায়ের জোরে এসব চালাতে পারিনা।
অপর স্কেভেটর ঠিকাদার ছাইদুর রহমান বলেন, আমার তিনটি স্কেভেটর (ভেকু) চলছে, সে উপজেলার বেলতা বানদিঘী আঃ রাজ্জাকের পুকুরসহ আরো দুইটি পুকুর খনন কাজ করছে। প্রতি রাতে ওই পুকুরের গভীর থেকে বালু উত্তোলনের কথা জানতে চাইলে বলেন, রাত করে দু’চার দশ গাড়ী বালু না তুললে পোষায় না। তাই মাঝে মধ্যে একটু বালু তুলি। তাকে মাটি ও বালু কতটাকা গাড়ী বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, মাটি নিকটে ৩০০ থেকে ৩৫০ এবং বালু ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা।
উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের নলপুকুর বেলতা বানদিঘী গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছাইদুর নামের এক স্কেভেটর ঠিকাদার আবদুর রাজ্জাকের পুরাতন পুকুর খননের কাজ করছে। সে দিনের বেলায় পুকুরে মাটিকাটে, আর রাতভর ওই পুকুরের পলিমাটি স্কেভেটর দিয়ে সড়িয়ে গভীর থেকে বালু উত্তোলন করে।
এ বিষয়ে ক্ষেতলাল থানার কর্মকর্তা ইনর্চাজ নিরেন্দ্রনাথ মন্ডল এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিডিয়ার সামনে কথা বলতে গেলে উপরের অনুমতি নিতে হবে বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম আবু সুফিয়ান বলেন, আমার কাছে কয়েকটি পুকুর খনন বিষয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছে। আমরা বেলতা বানদিঘী পুকুরে গিয়ে সরকারি যে অংশ বেদখল ছিল তা উদ্ধার করেছি। পুকুর খনন বা মাটি কাটা বিষয়ে কোন সুনিদিষ্ট নীতিমালা নেই। তবে ফসলি জমি কেউ নষ্ট ও ভূগর্ভস্থ্য খনন করে বালু উত্তোলন না করার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। পুকুর সংস্কারের নামে কেউ বালু উত্তোলন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।