শতবর্ষ আগে থেকেই ফুলের নান্দনিকতার সাজ না হলে কোনো অনুষ্ঠানই যেন পূর্ণতা পেত না। এ রকমারি ফুলের নান্দনিকতার সাজ অনেক দিনের। বিশ^জুড়েই ফুলের সৌন্দর্য্যরে এ নান্দনিকতার সাজ রয়েছে। ক্ষীণ আয়ু ওদের জীবন কাল হলেও ফুল ফোটার রাজ সৌসুম শীতকাল। তবে সব ঋতুতে ফুল ফোটলেও শীত সৌসুমে যত ফুল ফোটে তত আর কোনো মৌসুমে ফোটে না। ছয় ঋতুতেই বিভিন্ন প্রজাতির ফুল প্রকৃতি পরিবেশকে সর্বদা সজীব ও প্রাণবন্ত করে রাখলেও পাঁপড়ি মেলার পর ওদের আয়ুকাল ১০ থেকে ২০দিন। আবার ঝডে পড়া ফুলের বংশবিস্তারের কলিগুলো ফুলে-ফুলে প্রাণবন্তর করে তুলে প্রাকৃতিকে।
ফুল বা পুষ্প হলো উদ্ভিদের বিশেষ একটি মৌসুমী অঙ্গ যা উদ্ভেদের প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এটি উদ্ভিদের পরিবর্তিত বিটপ। ফুল থেকে উদ্ভিদের ফল হয়। তাই সপুষ্পক উদ্ভিদের যে রুপান্তরিত অংশ ফল ও বীজ উতপাদনের মাধ্যমে বংশবিস্তারে সাহায্য করে তাকে ফুল বলে। কান্ড, শাখা- প্রশাখা শীর্ষে অথবা পাতার কক্ষে ফুল জম্ময়। ফুল উদ্ভিদের সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন অংশ। সমস্ত সপুষ্পক উদ্ভিদের ফুল ফোটে ও এরা উদ্ভিদের বংশবিস্তারে সাহায্য করে। তবে গঠন অনুসারে একটি ফুলের দুটো প্রধান অংশ থাকে। অঙ্গজ অংশ ও প্রজনন অংশ। আবার একটি আদর্শ ফুলের চার প্রকারের অংশ বোটার ওপর অবস্থিত পুষ্পাক্ষ নামক একটি অংশের উপর চক্রাকারে বিন্যস্ত থাকে। পুষ্পাক্ষ এর উপর সাজানো এই প্রধান অংশ চারটি হল: বৃতি মন্ডল, দল মন্ডল, পুং স্তবক ও স্ত্রী স্তবক। ফুল প্রকৃতিকে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ সাজে সাজিয়ে দেয়। তাই ফুল আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক। প্রতি বছর ঘুরে ফিরে আমাদের দেশে ছয়টি ঋতুর অপুর্ব সমন্বয় ফুলের বৈচিত্রে যোগ করেছে অন্যরকম এক বন্দনে। ঋতু বৈচিত্র্যের সাথে তাল মিলিয়ে ফুলও তার সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয় ভিন্ন ভিন্ন সাজে। নানা প্রজাতির ফুল আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে সর্বদা সজীব ও প্রাণবন্ত করে রাখে রূপ ও সুবাসের মাধ্যমে। তাই তো কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কণ্ঠে কাজলা দিদির কবিতায়
“ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই”,
কবি তার এই পংক্তির উক্তিটিতে এই আকুলতা বুজাতে চেয়েছেন-সব ধর্মের ও বর্ণের মানুষকে নির্মল আনন্দ দান করার ক্ষেত্রে ফুলের বিকল্প কোনো উপাদান খঁজে পাওয়া যায় না।
ফুলের বিচিত্রতা হলো-বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের মসমারোহ,মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখে। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে ভিন্ন ভিন্ন ফুল তাদের অনাবিল সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে হাজির হয়। ছয় ঋতুতেই ভিন্ন-ভিন্ন ধরণের ফুল ফুটে থাকে যেমন- গ্রীষ্মকালীন পলাশ, বেলী, বকুল, কৃষ্ণচুড়া, চাঁপা, গন্ধরাজ প্রভুতি,এরপর ঋতুর পরিবর্তন বর্ষাকাল- এ সময় অবিরাম বৃষ্টিপাতের সাথে সাথে শুরু হয় নানা ধরণের ফুলের আত্মপ্রকাশ যেমন- কদম, জুঁই, শাপলা, কেয়া, মালতী, করবী ইত্যাদি ফুলের আগমন বর্ষাকালে প্রকৃতিকে নতুনভাবে সাজিয়ে দেয়। এ সাজের মধ্যে প্রকৃতি যেন বর্ষাঋতুকে বিদায় জানিয়ে,শান্ত ও স্নিগ্ধ শরতকে স্বাগত জানায়। বৃষ্টিপাত থেকে মুক্তি পেয়ে গাছ-গাছালি সবুজের সমারোহে নিজেদের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করতে পদ্ম, কাশফুল, কামিনী এবং আরো রকমারী ফুল প্রাকৃতির বুকে মেলে ধরে। শরতের শেষে আকাশে হালকা সাদা সাদা মেঘ নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হয় হেমন্তকাল। এ সময় সোনালী ফসলের গন্থে যখন মনে আনন্দ জেগে উঠে তখন তাতে অন্যরকম ভালোলাগা তৈরি করে বিভিন্ন ফুলের মধুর সুবাস। হেমন্তকালে আগমনকারী এসব ফুলের মধ্যে চাঁপা, শেফালী, পারুলসহ অর্ধশত ফুল। এরপর প্রাকৃতিকে অনেকটা প্রাণহীন মনে হয় হেমন্তকালকে বিদায়ে শীতকালীন ঋতুর আগমনে। এসময়ে গাছের পাতা শূণ্যতায়ের মধ্যেও পরিবেশকে অনেক মোহময় ও মধুর করে রাখে শীতকালীন ফুলগুলো। শীতকালে গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, সূর্যমুখী, গাদা, বকুল,জারবেরা, মনিংগ্লোরি, সুইট পি, অ্যাজালিয়া, গ্ল্যাডিওলাস, ষ্টার,ডেইজি, পপি, ভারবেনা, এন্টিরিনাম, সিলভিয়াসহ শত রকমের ফুলের আগমনে উজ্জীবিত করে তুলে প্রকৃতিকে। এরপর ঋতুরাজ বসন্তকালের আগামন। এ ঋতুরাজে প্রকৃতি তার সমস্ত সৌন্দর্য ও সজীবতা বিকশিত করে নতুন রুপে। বসন্তের ফুল শিমুল, পলাশ, মাধরী, অশোক প্রর্ভতি ফুল ঘিরে রাখে অনাবিল সজীবতায়। বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘আহ, আজি এই বসন্তে/কত ফুল ফোটে।”কবির এ পংক্তিতে বসন্তের ফুলের সৌন্দর্যবৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া যায়।