সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের কাদের মির্জা বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব পদ বাঁচাতে অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। চট্টগ্রামের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বরং রক্তপাত হয়েছে। এটাকে মেনে নেওয়া যায় না। আজ জাতির জনক বন্ধবন্ধুর সংগঠন আ.লীগ পথহারা।
তিনি বলেন, আপনি মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে কতদিন টিকে থাকবেন। আজকে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে পারবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। নেত্রী দেশের প্রতি কমিটেড, উন্নয়নে শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের রোল মডেল। তিনি বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা ২ঘন্টা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সরকারী মুজিব কলেজ মাঠে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন।
নাগরিক সমাজের সমাজের আহ্বায়ক ঢাকাস্থ নোয়াখালী সমিতির সভাপতি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী, আ.লীগ নেতা ও শিল্পপতি গোলাম শরিফ চৌধুরী পিপুল, আ.লীগের কেন্দ্রীয় ইস্কান্দার মির্জা শামীম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল করিম জুয়েল, বসুরহাট পৌরসভা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম পাশা চৌধুরী রুমেল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মহিলা আ.লীগের সভানেত্রী আরজুমান পারভীন রুনু, আমেরিকান প্রবাসী ও আ.লীগ নেতা আইয়ুব আলী প্রমুখ।
ওদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের সেতুমন্ত্রী এ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জোরালগঞ্জ সড়ক, ছোটধলী ব্রিজ, বসুরহাট বাইপাস সড়ক, চরএলাহী সড়ক, চৌধুরীহাট সড়ক, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এ উন্নয়নের কারণে তিনি আবারও নির্বাচিত হবেন।
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, অপরাজনীতির কাছে মাথা নত কারীরা আমার ভোটারদেরকে অভিনন্দন পর্যন্ত জানায়নি। যে দলের (আওয়ামী লীগ) জন্য সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছি, তারাও খবর নেয়নি। সংবর্ধনার জবাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে কাদের মির্জা বলেন, ভার্চুয়াল ভিডিও কনফারেন্স এর প্রোগ্রাম দিয়ে যারা কথা রাখেনি, তারা অপশক্তির কাছে মাথানত করেছে।
তিনি ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ঢাকায় বসে রাজনীতি করবেন? আমার নেতাকর্মীরা আপনাদেও পিছনে স্লোগান দেয়। ওবায়দুল কাদের সাহেব- পদ টিকাতে অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি আমাকে টেলিফোনে বলেন “তুমি আমার পদ খাবে নাকি?”। কাদেও মির্জা বক্তব্যেও এক ফাঁকে সমস্বরে স্লোগান দিতে থাকেন, “এক দফা এক দাবী, একরাম তুই কবে যাবি”। একরাম চৌধুরীর বহিষ্কার পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ দাবীতে তিনি আগামী ৩১ জানুয়ারী রোববার কোম্পানীগঞ্জে সর্বত্র আধাবেলা হরতাল পালনের কথা আবারও উল্লেখ করেন। হরতাল চলাকালীন সময়ে কাক-পক্ষীও উড়তে পারবে না।
আবদুল কাদের মির্জা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাননীয় মন্ত্রী বলেছিলেন ঘরে ঘরে চাকুরী দিবেন। আমার ছেলে মেয়েদের সে চাকুরী কই? তিনি বলেন, অন্ততঃ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৫শ ও কবিরহাট উপজেলায় ৫শ ছেলে মেয়ের চাকুরী যদি না হয় জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবো। গ্যাস দিবেন বলেছেন, কোন ষড়যন্ত্রে গ্যাস আসেনি তা জানি। একরাম চৌধুরীর আমার গ্যাস ফিল্ডের নামটা পর্যন্ত নিয়ে গেছে। গ্যাস পাওয়া গেছে কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুরে আর নাম দেয় হয়েছে কবিরহাটের সুন্দলপুরের। এসব বললে তিনি (ওবায়দুল কাদের) নাকি অসুস্থ, অসুস্থ হলে অপশক্তির কাছে মাথানত করেন কিভাবে? মন্ত্রীর (ওবায়দুল কাদের) কাছে লোকজন কোন অভিযোগ নিয়ে যেতে পাওে না উল্লেখ করে কাদের মির্জা বলেন, একরাম চৌধুরীর চামচারা সব সময় মন্ত্রীকে ঘিওে রাখে।
কাদের মির্জা আরও বলেন, বহিষ্কারের হুমকী দিচ্ছেন? বহিষ্কার করবেন, বহিষ্কার করলেও আমি যতদিন বেঁচে থাকি আমি আপনাদের পাশে থাকব, মিছিলে আপনাদের সাথে শ্লোগান দিব, নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জয়গান ও শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলবো। গ্রেফতার করবেন? ১৯৮২ সাল থেকে জেল খেটে আসছি। এখন যারা ষড়যন্ত্র করেন, তখন তো তারা মায়ের পেটে ছিলেন। আবদুল কাদেও মির্জা জানতে চান “ওবায়দুল কাদেও সাহেব, আপনি কিভাবে স্যারেন্ডার করলেন, কিভাবে আত্মসমর্থন করলেন? আমার আব্বা কি রাজাকার ছিল? ওবায়দুল কাদেও সাহেব আপনার আব্বা মোশারফ হোসেন রাজাকার নয়, তিনি বসুরহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আর যারা আমার পরিবারকে নিয়ে রাজাকার বলছে, তাদেও সাথে আত্মসমর্পণ করছেন।
তিনি বসুরহাট পৌরসভায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি দল থেকে বহিষ্কার না হলে, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে। বিএনপি-জামায়াতের সাথে বৈঠক করে এলাকাতে শান্তি-শৃংখলার, রাজনীতিক স্বহাবস্থানের ব্যবস্থা করবো। তবে তিনি আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জামায়াতের নাম উল্লেখ করে বলেন, অস্ত্রবাজরা অস্ত্র ফেলে দাও। ১৬ জানুয়ারী প্রমাণ হয়েছে নির্বাচন করতে অস্ত্র লাগে না। আমরা একরাম চৌধুরীর মত নয় যে, নিজের সন্তানের হাতে অস্ত্র তুলে দিব। যেদিন আমার সন্তান অস্ত্র হাতে নিবে, সেদিন যেন আমার মৃত্যু হয়। তিনি একরাম চৌধুরীর ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার বাবা আমার ছোট, তুমি আমার ছেলের মত। তোমার বাবার মুখের কথা-তুমি বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষিত, চেহারাও ভালো, তুমি তোমার অস্ত্র ফেলে দিয়ে শান্তির রাজনীতিতে আস। কথা দিলাম আমরা তোমাকে সহযোগিতা করবো।
তিনি একরাম চৌধুরী সহধর্মীনি কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিউলী একরামের সমালোচনা করে বলেন, পর-পুরুষের সাথে যে নারী মদের আড্ডায় বসে সেই ছবি আবার ফেইসবুকে ভাইরাল হয়, সে কখনও ভালো হতে পাওে না। একরাম চৌধুরী টেলিভিশন লাইভে বলেছে, আমি নাকি অসুস্থ, আমার নাকি চিকিৎসার প্রয়োজন। আমি বলবো আমার নয়, তার (একরাম চৌধুরী) চিকিৎসার প্রয়োজন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সংগীত শিল্পী মমতাজ এমপি ও কর্ণিয়া সংগীত পরিবেশন করেন।
উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেও বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বক্তব্য দেননি। এ ব্যাপাওে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেন, জাতীয় সংসদেও অধিবেশন চলার কারণে তিনি বক্তব্য দিতে পারেননি।