লালমনিরহাটের একমাত্র খেতাবপ্রাপ্ত বীর প্রতীক আজিজুল হক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে জামুকাকে নিজের মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রমাণ দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের তালিকায় উঠেছে জেলার একমাত্র বীর প্রতীক লালমনিরহাটের অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (অবঃ) বীর প্রতীক আজিজুল হকের নাম।
জামুকার ওই তালিকায় লালমনিরহাটের আরও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আছে। যিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, গণপরিষদের সদস্য, সংবিধান স্বাক্ষরদাতা ও সংসদ সদস্য প্রয়াত আবুল হোসেনের নাম।
শনিবার (৩০ জানুয়ারী) লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের হল রুমে অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠানে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমানের কোন নথি জমা দিবেন না বলে জানিয়েছেন।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের ছেলেও জানান, বাবার যুদ্ধ করার প্রমাণ দেখাতে যাবেন না তিনিও। তারা বলছেন, এতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের অবমাননা করা হয়েছে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে গত ৬ জানুয়ারি জামুকা জানায়, তাদের সুপারিশহীন যেসব বেসামরিক গেজেট প্রকাশ হয়েছে, প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশের অংশ হিসেবে সেগুলো আগামী ৩০ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই করা হবে। আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেয়ার কথা জামুকার।
এই তালিকার ১৭৬ নম্বরে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আজিজুল হক বীরপ্রতীক ও ১৪০ নম্বরে প্রয়াত আবুল হোসেনের নাম আছে।
এ বিষয়ে জামুকার সদস্য ও লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন জানান, এই তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। এখানে তার কিছু করার নেই। তবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের তালিকায় লালমনিরহাটের এই দুইজনের নাম দেখে বিস্মিত।
‘যাদের কাগজের কমতি রয়েছে তাদের সবাইকেই আগামী ৩০ জানুয়ারি ডাকা হয়েছে, যারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা খাচ্ছেন তাদের সবাইকেও ডাকা হবে। এজন্য তালিকা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে কেউই মুক্তিযাদ্ধা বলে বিবেচিত হবেন না বলে জানান জামুকার মোতাহার হোসেন।
বীরপ্রতীক আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা কোন দেশে আছি? জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমাকে আবারও প্রমাণ দিতে হবে আমি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি কি না.?
‘আমার কাগজে কমতি আছে? আমাকে বীরপ্রতীক খেতাব দিয়েছে তৎকালীন সময়ে। আমি জানতে চাই মোতাহারের কী কাগজ আছে? আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় তার (মোতাহার)নাম লিখিয়েছিলাম...কুচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ ক্যাম্পের রিক্রুটিং বোর্ডের সদস্য ছিলাম আমি। তিনি (মোতাহার) ছাড়াও মেজর নওয়াজেশ আলী খান, ডা. এম এম খান উপস্থিত ছিলেন ওই রিক্রুটিং কমিটিতে।
আজিজুল ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘যাচাই-বাছাই তালিকায় আমার নাম থাকলে জামুকা সদস্য মোতাহার হোসেন এমপির নামও থাকা উচিত ছিল। তা না হয়ে হয়েছে উল্টো।
জামুকার যাচাই-বাছাইয়ের তালিকায় বাবার নাম থাকায় ক্ষুব্ধ প্রয়াত আবুল হোসেনের বড় ছেলে অ্যাডভোকেট গোলাম হায়দার। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বাবার অবদান নিয়ে যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গবেষণা করছে এবং করবে, সেখানে আমার বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি যে কতটা কষ্টকর ও বিব্রতকর তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
হায়দার জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনকে নিয়ে সম্প্রতি পিএইচডি প্রোগ্রামে গবেষণা প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল।
লালমনিরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যার হাত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হয়েছে, যিনি মুক্তিযোদ্ধোদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে জামুকা এই কাজটি করেছে।
জামুকার সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ না করে জামুকা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের তালিকায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও সর্বজন স্বীকৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে বিরোধের জন্ম দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বোধ করছেন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির লালমনিরহাট সদর উপজলার সদস্যসচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়। তবে এতে তার কিছু করার নেই বলে জানান তিনি।