অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অপরাধের কারণ অনুসন্ধানে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল আলীম মাহমুদ। তিনি বলেছেন, অপরাধের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। অপরাধের ধরণ ও কারণ ভিন্ন ভিন্ন। একেক দেশে অপরাধের ধরণ একেক রকম। বাংলাদেশে যা অপরাধ, অন্য দেশে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য নাও হতে পারে। তাই প্রত্যেকটা অপরাধের পিছনের কারণ খুঁজে আনতে হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এটা বেশি জরুরী। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এবং মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) ও রংপুর প্রেসক্লাব যৌথ উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়।
এতে কমিশনার আবদুল আলীম বলেন, আমাদের দারিদ্রতা, শিক্ষার অভাব, পারিপার্শ্বিকতাসহ বিভিন্ন কারণে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম, মাদক, সন্ত্রাস, খুন, চাঁদাবাজি, হয়রানি, ধর্ষণ, অপহরণ সবই অপরাধ। তবে সাইবার ক্রাইম এখন অহরহ ঘটছে। এটা নিয়ন্ত্রণেও সরকার আইনের প্রয়োগ করছে। সাইবার অপরাধ দমনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজ ও দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে হোয়াইট কালার ক্রাইম। এই অপরাধ বেশির ভাগ মানুষের চোখে অপরাধ নয়। কিন্তু পেশাকে ব্যবহার করে হোয়াইট কালার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু তা মানুষের ধরা ছোয়ার বাইরে থাকছে, নজরে আসছে না। যেমন চিকিৎসকদের অনেকেই এখন প্যাথলোজির সাথে আগেই কমিশন চুক্তি করে রাখেন। শুধু তার কাছে রোগী গেলে একটু দেখেই ওনি রোগীকে অনেকগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে শুনিয়ে একটা লম্বা প্রেসক্রিপশন হাতে ধরিয়ে দেন। অথচ রোগীর অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার নাও প্রয়োজন থাকে। কিন্তু প্যাথলোজি থেকে কমিশন কন্ডিশনের আশায় এটা চিকিৎসকেরা করছেন। এটাই হোয়াইট কালার ক্রাইম। একই ঘটনা সড়কেও ঘটছে। যে সড়ক দিয়ে পাঁচ টনের ট্রাক চলাচলের কথা পুলিশ, বিআরটিএ বা অন্য যারা রয়েছেন, তাদের সহযোগিতায় পনের বিশ টনের গাড়িও চলে যাচ্ছে। এতে ওই সড়কটি বিশ-ত্রিশ বছর টেকসই হবার কথা থাকলেও তা অল্প সময়ের মধ্যে ভেঙে যাচ্ছে। অসময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু লাভবান হচ্ছে হোয়াইট ক্রাইমে জড়িত পেশার অপব্যবহারকারীরা। এ ধরণের অপরাধও নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরী। তা না হলে কোথাও থেকে মানুষ কাঙ্খিত সেবা পাবে না।
মতবিনিময় সভায় রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রশীদ বাবুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সরকার রফিকের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আরপিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) আবু বকর সিদ্দীক, উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মেনহাজুল আলম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি এ- মিডিয়া) উত্তম প্রসাদ পাঠক, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) উজ্জ্বল কুমার রায়, রংপুর প্রেসকøাবের সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব রহমান, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাভেদ ইকবাল, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক নজরুল মৃধা, দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার আবদুর রউফ সরকার, চ্যানেল আই’র স্টাফ রিপোর্টার মেরিনা লাভলী, এনটিভির সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার একেএম মঈনুল হক, দি নিউজ টুডের রংপুর প্রতিনিধি একেএম শরিফুজ্জামান বুলু, বাংলাদেশের খবরের স্টাফ রিপোর্টার রফিকুল ইসলাম, ঢাকা পোস্ট ও দৈনিক দাবানল এর প্রতিবেদক ফরহাদুজ্জামান ফারুক, সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক প্রমুখ।
মতবিনিময় রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সড়কে যানজট নিরসন, মাদকসহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও মিডিয়ার ভূমিকা এবং কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে রংপুর প্রেসক্লাবের সদস্যরা ছাড়াও সিটি প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, ভিডিও জার্নালিস্ট, রংপুর ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।