পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আবু হানিফ খান (৪০) ও এক ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ২০ জন। এ সময় উপজেলা যুবলীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫/৬ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। আহত উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আবু হানিফ খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক উপজেলার ১০ নম্বর গুলিসাখালী ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলমসহ রানা মাল, কবির মাল ও রুবেলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুল হক সেলিম মাতুব্বর জানান, গত রোববার রাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইদ্রিস হোসেন (২৬) নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করে এক দল সন্ত্রাসী। এর প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের উদ্যোগে ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. রফিক উদ্দিন আহম্মেদ ফেরদাউস ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিনের লোকজন দিনব্যাপী ওই প্রতিবাদ সভাকে প্রতিহত করতে চেষ্টা করেন। এমনকি বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে দলীয় কর্মীরা আসতে চাইলে তাদের মারধরসহ বিভিন্নভাবে প্রতিহত করা হয়। এ প্রতিবাদ সভা শেষে রাত ৮টার দিকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু হানিফ খান বাসায় যেতে মোটরসাইকেলের জন্য দলীয় কার্যালয়ে সামনে দাঁড়ান। এ সময় ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল এসে তাকে ধরে নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র রফিউদ্দিন ফেরদাউসের পার্শ্ববর্তী বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ওই যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। এ সময় হামলাকারীরা উপজেলা যুবলীগের কার্যালয়ে থাকা ৫০টি চেয়ার, ২টি টেবিল, অফিসের দরজা-জানালা ও টেলিভিশন ভাঙচুর করে। এর আগে তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম জনোকে পিটিয়ে তার পা ভেঙে দেওয়াসহ তার সাথে থাকা আরো ৩ জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। এ সময় তাদের হামলায় আরো অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়। এসব অভিযোগের বিষয় জানতে পৌর মেয়র রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদাউসের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে নিজের কোনো ধরনের সংশি¬ষ্টার কথা অস্বীকার করে জানান, তিনি গত ২ দিন ধরে জরুরি কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে একটি হামলার কথা তিনি শুনেছেন। তিনি আরো জানান, কয়েকদিন আগে এক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা আক্রাম হোসেন শুভর ওপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাতুব্বরের বাড়িতে থাকা ইদ্রিস হমলা করে। এর জেরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে শুভর বন্ধুরা ইদ্রিসকে পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনার জেরে সেলিম মাতুব্বরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সোমবার ৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের হয়। এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগ ওই মামলা ও সভার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। এ নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কারা হামলাকারী বা কারা আহত তা আমার জানা নেই। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মোহম্মাদ মাসুদুজ্জামান জানান, তিনি স্টেশনে (থানা) ছিলেন না। হামলার ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। জানা যায়, ওই উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে আওয়ামী লীগের মধ্যে দু’টি গ্রুপ রয়েছে। এর একটিতে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদাউস ও অন্য গ্রুপে রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুল হক সেলিম মাতুব্বর। আর হামলায় আহত উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু হানিফ খান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল আলম জনো উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের লোক।