প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ও মুনাফালোভীদের কাজে লাগিয়ে রাজশাহীর চারঘাটের মাটি খেকো পাখি আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার পুরো নাম তুকসেরুল ইসলাম পাখি। তিনি চারঘাটের কে,টি,এ ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যাবসায়ী। তার দৌরাত্ম্যের কাছে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জনজীবন।
গত কয়েক বছরে মাটি খেকো পাখি উপজেলার হাজার হাজর একর কৃষি জমিকে পুকুরে পরিণত করেছেন। এখানে ওখানে অভিযোগ করেও লাভ হচ্ছে না। পাখির হাত এতটাই লম্বা যে, তার নাগাল পাওয়া যেন দুঃসাধ্য।
এ ছাড়া প্রতিদিন তার ভাটার অবৈধ ট্রলি ও ট্রাক্টরে অতিরিক্ত মাটি পরিবহনের ফলে ভেঙে চৌচির হচ্ছে এলাকার কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট। কিন্তু দেখার বা বলার যেন কেউ নেই। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার আসেনি। উল্টো পাখির হয়রানির শিকার হতে হয় প্রতিবাদী গ্রামবাসীকে। তার বিপুল অর্থ থাকায় এবং প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তিনি গ্রামের মানুষের কোনো প্রতিবাদ আমলে নেন না বলে জানিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা।
সরকারী নিয়ম অমান্য করে কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই চলমান মৌসুমে অন্তত ১০টি পুকুর খনন করেছেন তিনি। বর্তমানে চৌধুরীর বিলের পাশে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন। দুইটা ভেকু মেশিন দিয়ে দিন রাত সমান তালে চলছে পুকুর খনন। সারাদিন যাবৎ অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে চলছে সেই মাটি আনা নেওয়া। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে পড়তে হচ্ছে পাখির রোষানলে।
উপজেলার অনুপামপুর গ্রামের আফসানা শারনিন জানিয়েছেন, গ্রামের রাস্তা দিয়ে ইটভাটার মাটি আনা নেওয়ায় কয়েক বছর ধরে তারা রাস্তা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে চলাচল করতে পারছেন না। শুষ্ক মৌসুমে রাস্তাটি ধুলোয় ভরে যায়। ঘরের জানালা দরজা বন্ধ করে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, “আমরা একাধিকবার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। উল্টো ইটভাটার মালিকের রক্তচক্ষু সহ্য করতে হয়েছে।”
উপজেলার গঁওরা গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, “ একসময় আমাদের এ রাস্তা ছিল কাঁচা মাটির রাস্তা। বর্তমান সরকার আমাদের পাকা রাস্তা উপহার দিয়েছে। কিন্তু ইটভাটার ট্রাক্টরের তান্ডবে তা দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এখনো প্রতিদিন পাখি নামের এক ব্যাক্তির মাটি আনা নেওয়া চলছে। একদিকে কৃষি জমি গুলো পুকুরে পরিণত হচ্ছে, অন্যদিকে রাস্তার এ দশা।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইটভাটা মালিক তুকসেরুল ইসলাম পাখি বলেন, মাটি ছাড়া তো ইট হবেনা। আমরা ইট তৈরি করছি সেজন্য চারঘাটবাসী কম দামে ইট পাচ্ছে। সরকারী রাস্তা অন্য সবার মত আমিও ব্যবহার করছি। অবৈধ ট্রাক্টরের বিষয়ে বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করেই সব কাজ করছি।
পুকুর খননের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, অবৈধ পুকুর খননের কারণে ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এতে ফসল উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে প্রতিকার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
ইটভাটার কারণে গ্রামের রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে চারঘাট উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মকবুল হোসেন বলেন, “ইটভাটাগুলো গ্রামীণ রাস্তা ব্যবহারের নিয়ম মানছে না। ইচ্ছেমতো ট্রাক্টর চালানোর কারণে অল্প সময়ের মধ্যে গ্রামের রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি রাস্তা পরিদর্শন করে ইটভাটার মালিকদের ট্রাক্টর ব্যবহারে নিষেধ করা হলেও তারা মানছেন না।”