আবদুল কাদের মির্জা। তিনি নোয়াখালীর বসুরহাট পৌর মেয়র। এবার নিয়ে তিনি চতুর্থবার তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে দেশের নানা জায়গায় আলোচনা-সমালোচনা চলছেই। রীতিমত নোয়াখালীতে সন্ত্রাস এবং দুর্র্নীতিবাজ ব্যক্তিদের আরামের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন তিনি। নতুন নতুন তথ্য তিনি প্রতিনিয়ত মানুষের সামনে তুলে ধরছেন। নানা জনের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের তথ্য তুলে ধরেই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি। কিছু পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদী হন তিনি। এজন্য সকল হুমকি-বাধাও আসছে। তবে তা উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছেন তিনি। এরইমধ্যে মামলা-হামলারও শিকার হয়েছেন তিনি। তবুও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার তিনি। বিশেষ করে নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজির চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরছেন অকপটে। কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ এই ধরণের বক্তব্য দেওয়ার জন্য নিষেধও করছেন তাকে। কিন্তু তিনি বরাবরেই বলেই যাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্যে কোম্পানীগঞ্জের সরকারি অফিসগুলোর কিছু দুর্র্নীতিবাজ কর্মকর্তা এখন তাদের দুর্নীতি কমিয়ে দিয়েছেন। সতর্ক হয়েছেন-এমন জনশ্রুতিও রয়েছে এলাকায়। অবশেষে বৃহস্পতিবার সেই আবদুল কাদের মির্জার ডাকে কোম্পানীগঞ্জে অর্ধ দিবস হরতাল পালিত হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা থেকে ১৭ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তিনি। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ওসি-তদন্তকে প্রত্যাহার এবং উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফখরুল ইসলাম সবুজকে গ্রেফতারের দাবিতে ওই কর্মসূচীতে বহু লোকজন সাড়া দেয়। ওই অবস্থান ধর্মঘটে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আমাদের দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জে হরতাল পালন করা হবে। আবার শুক্রবার থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় কোম্পানীগঞ্জ চরকাঁকড়ার আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সবুজ টেকের বাজারে তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। ওই খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ ফখরুল ইসলাম সবুজকে আটকও করেন। এরপর তাকে পুলিশ ছেড়েও দেয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে আবদুল কাদের মির্জা নিজেই থানার সামনে অবরোধ শুরু করেন। পরে বুধবার পৌর এলাকায় হরতালের ঘোষণাও দেন। ওই হরতাল কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীরা বসুরহাট-বাংলাবাজার সড়কের এবং আশপাশের কয়েকটি সড়কে বাস-ট্রাক দিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। ফলে কোম্পানীগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে বসুরহাট বাজার কার্যত অচল অবস্থা তৈরী হয়। পরবর্তীতে বুধবার সকালে হরতাল কর্মসূচি স্থগিত করেন তিনি।
স্থানীয় দলীয় নেতা-কর্মীরা জানায়; এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মেয়র আবদুল কাদের মির্জা শপথ নিতে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় দাগনভূঁইয়া এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শহরে দু’দফায় তাঁর গাড়ী বহরে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এই হামলার জন্য তিনি ফেনীর সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী ও নোয়াখালীর- ৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী এবং তাদের অনুসারীদের দায়ী করেছেন। হামলার প্রতিবাদে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে ও পরবর্তীতে বসুরহাটে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন। এছাড়াও ঘটনার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা কোম্পানীগঞ্জে ফুঁসে উঠেন। মিছিল-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন।
সূত্র জানায়, মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও আল্লাহকে স্বরণ কর’ এই শ্লোগান নিয়ে সামনে রেখে বিগত দুইমাস ধরে কোম্পানীগঞ্জে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন। বিশেষ করে তিনি বিগত ১৬জানুয়ারি বসুরহাট পৌর নির্বাচন শান্তিপুর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনের ওপরের মহলের কাছে জোরালো দাবী জানিয়েছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন-বসুরহাটে পৌর নির্বাচনে নানা ধরণের অনিয়ম করার পাঁয়তারা করছেন ফেনীর এমপি নিজাম হাজারী এবং নোয়াখালীর এমপি একরামুল করিম চৌধুরী। এই দুইজন দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আয় করেছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে এরা এমপি নির্বাচিত হবেন না। এরা নেতা-কর্মীদের অধিকার লুট করেছেন। জনগণ এদের সাথে নেই। আবদুল কাদের মির্জার এমন ধরণের বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয় সারা দেশেই। দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ মির্জা কাদেরের বক্তব্যে নাখোশ হয়েছেন। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর এই সাহসী ভূমিকায় প্রশংসা করেছেন। অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়। দফায় দফায় পত্রিকা এবং টিভি চানেলের শিরোনাম হন তিনি। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তাঁর লাইভ সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। ওই সাক্ষাতকারেও তিনি উপর্যুক্ত দুই এমপিকে জড়িয়ে অনেক বক্তব্য রাখেন। ফলে মিডিয়ার বদৌলতে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী সাধারণ মানুষের কাছে হিরো হয়ে উঠেন মির্জা কাদের।
বসুরহাটের দলীয় নেতা-কর্মীরা জানায়, দুর্নীতি বিরোধী তিনি বক্তব্যে দেশের আরো কিছু মন্ত্রী এমপির অনিয়মের চিত্রও মিডিয়ায় তুলে ধরেন। এতে দলের একটি অংশ তাঁর বিরুদ্ধে তেলে-বেগুণে জ¦লে উঠেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তাঁকে দল থেকে বহিস্কারেরও দাবী জানান। ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এজন্য নোয়াখালীতে একটি মামলায় মির্জা কাদেরকে আসামীও করা হয়। মির্জা কাদের এই মামলা সাজানো এবং মিথ্যা দাবী করে সমাবেশও করেন। একইসঙ্গে তিনি এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে তাঁর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের উস্কানিদাতা হিসেবে চিহিৃত করেন। যদিও একরামুল করিম চৌধুরী এমপি ও ফেনীর এমপি নিজাম হাজারী তাদের বিরুদ্ধে দুর্র্নীতির অভিযোগ বিভিন্নভাবে অস্বীকার করছেন। তাঁরা বলছেন-এভাবে মির্জা কাদের দলের জন্যই ক্ষতি করছেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, বিগত ১৬জানুয়ারি বসুরহাট পৌর নির্বাচন অবাধ এবং শান্তিপুর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ভোট কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি ছিল। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলাও হয়নি। রক্তপাত বিহীন নির্বাচন। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। ভোট শেষে দেখা যায়, বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন আলোচিত মির্জা কাদেরই। ওইদিন স্বরণকালের মিডিয়া কর্মীরা বসুরহাটে ছুটে আসেন সরজমিনে নির্বাচনী রিপোর্ট করতে। মুলত: বার বার গণমাধ্যমে সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে মির্জা কাদেরের বক্তব্যে ভোটাররা উৎসাহিত হন। কেন্দ্রে আসেন। একইসঙ্গে তাঁর জনপ্রিয়তাও বেড়ে যায় এতে। নির্বাচনের পরেও এখন পর্যন্ত তিনি সাহস করে উপর্যুক্ত সত্য কথা বলা অব্যাহত রেখেছেন। মানুষজন বলছেন- সুষ্ঠুভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি তা রক্ষা করেছেন। এখন দেখার বিষয়- আগামী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন গুলো তিনি কিভাবে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেন?। তবে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় তাঁর সংবর্ধনা সভায় বলেছেন-ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে কাউকে সন্ত্রাস এবং অনিয়ম করতে দেয়া হবেনা। তিনি আরো বলেছেন- নিজের জীবন দিয়ে হলেও সত্যের পক্ষে তিনি অবিচল থাকবেন। কেউ সন্ত্রাস করলে প্রতিহত করা হবে। আমৃত্যু তিনি মানুষের সেবাই করবেন।
বসুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল খায়ের এবং রামদী ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারেফ হোসেন নাহিদ এই প্রতিনিধিকে বলেন, আবদুল কাদের মির্জা আমাদের কোম্পানীগঞ্জের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ। তিনি জনগণের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে দিন-রাত মানুষের কল্যাণেই কাজ করছেন। বিশ্রাম নেওয়ার সময়টাও পাচ্ছেন না। দলীয় কাউকে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাস করতে দিচ্ছেন না। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে তিনি শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছেন। নিজ দলের কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। আসলে আমাদের এমন নেতাই প্রয়োজন আছে। এই নেতার জন্য আমরা রক্ত দিব, জীবন দিব। এতে কোন ভাবেই পিছপা হবোনা। ওদিকে শুধু কোম্পানীগঞ্জ নয়; আশপাশের উপজেলা গুলোতেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মির্জা কাদেরের অনুসারী হয়ে উঠেছেন। তাদের অনেকেই মির্জা কাদেরের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগও করছেন। তাদের ভাষায়- আমরা সুযোগের অপেক্ষায় আছি। এসব দলীয় নেতা-কর্মীরা সাম্প্রতিক সময়ে দলের সভায় বলছেন-মির্জা কাদেরের মত ন্যায় নীতিবান এবং সাহসী নেতা বাংলাদেশের প্রত্যেক উপজেলায় দরকার আছে। এরাই মাটি এবং মানুষের প্রকৃত বন্ধু। এই বীর সাহসী নেতাকে স্বাগত জানাই।