সারাদেশে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য আর দুর্নীতির রামরাজত্ব তৈরির চেষ্টা যারা করছে, তাদের কারণে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। আর তাঁর হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে মুজাক্কির হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের গ্রেফতার ও ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে নোয়াখালীসহ সারা দেশে যখন বিক্ষোভ চলছে, তখন অব্যাহত রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে দফায় দফায় অবরোধ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল বের করেন জোটের নেতাকর্মীরা। তবে এই মিছিল লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন বলে গণমাধ্যম তথ্য প্রকাশ করেছে। শাহবাগে মুশতাক আহমেদের গায়েবানা জানাজাও অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি এ মৃত্যুর স্বচ্ছ এবং স্বতন্ত্র তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি বরাবরই আলোর পথে ভালোর পক্ষে থেকেছে। সেই সুবাদে অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে রাজপথে থেকেছে। মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত-বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার সবার মুক্তি ও আইনটি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি শাহবাগ ও পরীবাগ হয়ে ফের শাহবাগ মোরে এসে থেমে যায়। এরপরই রাস্তায় অবস্থান নিয়ে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ মৃত্যুকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড’ হিসাবে অভিহিত করেছেন নতুনধারার রাজনীতিকগণ।। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাতে হচ্ছে বারবার।
করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর এপ্রিলে লেখনীর মাধ্যমে দুর্নীতি-লুটপাটের প্রতিবাদ করেছিলেন লেখক মুশতাক। তার অপরাধ ছিল-তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে, অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। তাই কারাগারে আটকে রেখে তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি ছয়বার জামিনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আবেদন নাকচ করা হয়েছে। এটি নির্মম ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড’। লেখক মুশতাক ৯ মাস কারারুদ্ধ ছিলেন। মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করার জায়গায় চলে গেছে বর্তমান সরকার।’শুধু বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করলে হবে না, এ হত্যারও বিচার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আপনি নিজেও বন্দি, তাই আপনি সত্যি কথা বলতে পারেন না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আটক হওয়া প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেন। এই আইন বাতিল করুন। না হলে আপনাকেও একদিন এই আইনের মারপ্যাঁচে পড়তে হবে। মুশতাক আহমেদকে বিনা বিচারে কারাগারে রাখা হয়েছিল। ছয়বার জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়েছে। জেলে রেখেই এই সরকার তাকে হত্যা করেছে। ভোটারবিহীন সরকার থেকে আর কী আশা করা যায়? প্রধানমন্ত্রী আপনাকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশে আজ যা অন্যায় হচ্ছে এর দায় আপনাকেই নিতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ যে দিন জেগে উঠবে, সেদিন কেউ পালানোর পথ পাবেন না। আপনাদের সবাইকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
এমন একটা পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা যে, জনতার কন্ঠরোধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামক একটি আইন চালু করা হয়েছে। অথচ বিশ্ব গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা বলছেন, এটা কুখ্যাত আইন। আজকে শুধু ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনকে দায়ী করলে হবে না। এই আইন যারা প্রণয়ন করছে তারাও দায়ী, যে রায় দিয়েছে সে ও আদালত দায়ী। এটার কারণে ভোগান্তি হচ্ছে। এই আইন বাতিল বা প্রত্যাহার আমি চাই না। আমি বলতে চাই, এই আইন যারা প্রণয়ন করেছে তাদের একদিন বিচার হবে।’ নূরুল হক নূর বলেন, ‘এই হত্যার দায় প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে। আজ আমরা সবাই যদি আওয়াজ তুলতে না পারি, তাহলে আমাদের অবস্থাও লেখক মুশতাকের মতো হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কারণে দেশটা একটা উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে। এটা একটা অসহনীয় দম বন্ধ করা আইন। যেভাবে হোক এ আইন ভাঙতে হবে। আমার কাছে বারবরই মনে হয়েছে যে, সরকার সমালোচনায় ভয় পায়। এ কারণে সরকার সব ধরনের কথা বলার অধিকারকে হরণ করতে চাচ্ছে। মুশতাকের মতো মানুষদের আটকে রেখে, পিটিয়ে হত্যা করে সরকার এবং আদালত একাকার হয়ে গেছে। খুনের আসামি জামিন পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কথা বলার জন্য একজনকে আটক করা হলে তাকে জামিন দেওয়া হয় না। এভাবে বাংলাদেশের মত আন্তরিক দেশে সন্ত্রাসী-স্বাধীনতা বিরোধী-দুর্নীতিবাজদের ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া অব্যহত থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ছাত্র-শিক্ষকদের। যা আমাদের কারোই কাম্য নয়। কাম্য নয় বিধায়-ই কিন্তু আওয়াজ তুলছি-কথা বলছি। এই কথা বলার মাত্রা আরো বাড়ানোর জন্য নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকদের সাথে ঐক্যবদ্ধ পথচলা চাই সকলের।
খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জাতিকে কথা বলার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করার জন্য যে আইন করা হয়েছে, সেই আইনের কারণে জামিন না পেয়ে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রিয় অনুমতিপ্রাপ্ত কুমির ব্যবসায়ি লেখক মুশতাককে জেলখানাতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে। মৃত্যুর পর তাঁর লাশকেও যথাযথভাবে সমাহিত করার জন্য সরকারের কোন উদ্যেগ না থাকাটাও আমাকে ব্যথিত করেছে। মৃত্যুও যেন এদেশে এখন পাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে রাত ৮ টায় মৃত্যুবরণ করলেও প্রশাসনের অবহেলার কারণে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের ময়নাতদন্ত পরদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেষ হয়। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে তার ময়নাতদন্ত হয়। মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারের পক্ষ থেকে জয়দেবপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত থেকে জানা গেছে, তার পিঠের মধ্যভাগে যে কোনো সময় ‘ঘা’ হয়েছে এমন দাগ পাওয়া গেছে। ডান হাতে হালকা লালচে কালো ছোট দাগ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে হাসপাতালে আনার সময় বা গাড়িতে উঠানোর সময় এ দাগ হয়ে থাকতে পারে। তবে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শাফী মোহাইমেন জানান, দৃশ্যত গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
তবে লেখক মুশতাক আহমেদেও গ্রেফতার হওয়া সেই দিনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, আমরা নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির নেতাকর্মীরা রোডমার্চ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মারকলিপি দেয়ার পরও বাড়ি ভাড়া সমস্যা সমাধানের কোন পদক্ষেপ দেখতে না পেয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি দিচ্ছিলাম একের পর এক। সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে গত বছর ৫ মে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব-৩। ৬ মে র্যাব মুশতাক ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেফতার করে। পরদিন ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, “মুশতাক ‘আই এম বাংলাদেশি’ পেজের এডিটর। তিনিও গুজব ছড়িয়েছেন। এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।” আর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।
লেখক মুশতাকের জেলখানায় মৃত্যুর ঘটনায় অবশ্য সারাবিশে^ নিন্দার ঝড় উঠেছে। সেই ঝড়ের মধ্যেই ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশপাশি এ মৃত্যুর স্বচ্ছ এবং স্বতন্ত্র তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। যৌথ বিবৃতিতে রাষ্ট্রদূতগণ বলেছেন, মুশতাক আহমেদ ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের অধীনে ২০২০ সালের ৫ মে বিনাবিচারে কারাগারে আটকে ছিলেন। বেশ কয়েক বার তার জামিন আবেদন করা হলেও সেক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছিল এবং কারাবন্দি অবস্থায় তার চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, মোশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি যেন অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করা হয়। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিধান ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে আমাদের সরকারগুলোর উদ্বেগ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদন্ডের অধীনে বাধ্যবাধকতার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে বিবেচনা করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
কানাডার হাইকমিশনার বেনোইট প্রফন্টেইন, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিসেস উইনি এস্টরুপ পিটারসেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মিসেস রেনজে টেরিঙ্ক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জাঁ মেরিন শুহ, জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিটা, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভার্ভিজ, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার-সোভেনডেন, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো ডি আসিস বেনিতেজ সালাস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত মিসেস আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মিসেস নাথালি চুয়ার্ড, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারের স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিই প্রমাণ করে রাষ্ট্রের চলমান সংকট সহজভাবে দেখছে না বিশে^র অধিকাংশ দেশ। তারা রাজনীতির নামে অপরাজনীতি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। যেভাবে মেনে নিতে পারেনি জামায়াত-বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের রাজনীতি, সরকার ও পুলিশ-প্রশাসনিক তৎকালিন অবস্থা। তারই প্রেক্ষিতে আমরা দেখেছি সৃষ্টি হয়েছে ওয়ান ইলেভেন। জাতির প্রয়োজনে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখা যেহেতু তাদের দায়িত্ব, তারাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো লোভ মোহহীন নিরন্তর স্বচ্ছ-সুন্দর দেশ গড়ার। লেখক মুশতাক কখনো মরেন না, বেঁচে থাকেন আমার আপনার অথবা আমাদের সন্তানদের বুকের ভেতর। সেখানে স্বপ্ন বোনেন লেখক মুশতাকদের সাহসী মানুষের।
লাশ আর মৃত্যু নিয়ে একের পর এক মাঠ গরম করা রাজনীতি যুগে যুগে গড়ে তুলেছে কিছু অতি লোভী মানুষ। যে কারণে লেখক মুশতাক আহমেদের ওপর কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন- মুশতাকের মতো একজন অরাজনৈতিক নিজস্ব চিন্তার লেখকের মৃত্যুর সঙ্গে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে স্বাধীনচেতা মানুষের মতপ্রকাশের সুযোগ গণতান্ত্রিক বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে আওয়ামী সরকার কালাকানুনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখাকে বরদাশত করছে না। যারা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের চেষ্টা করছেন তাদের হয় গুমের শিকার হতে হচ্ছে, নতুবা সরকারি হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তার সর্বশেষ শিকার হলেন মুশতাক আহমেদ। মুশতাকের মতো একজন অরাজনৈতিক, নিরীহ এবং নিজস্ব চিন্তায় স্বায়ত্তশাসিত ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সার লেখকের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সঙ্গে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত। কারান্তরীণ অবস্থায় তার মৃত্যুর ঘটনায় স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি। মুশতাক লুটপাটকারী, কালোবাজারি, সন্ত্রাসী বা ডাকাত ছিলেন না। তিনি একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন। তিনি চিরদিন অধিকারহারা মানুষের কাছে প্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। তিনি দেশবাসীর প্রার্থনা, চেতনা ও অনুভবে চিরদিন বেঁচে থাকবেন। এমন মানুষকে জামিন না দিয়ে খুন করার মধ্য দিয়ে মানুষকে নিঃশব্দ করতেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় জীবনের অনুষঙ্গ করা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাতেও তারা আঁতকে ওঠে। রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। নিষ্ঠুর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের সব বৈশিষ্ট্য এখন ফুটে উঠেছে। রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে মাফিয়া রূপ ধারণ করেছে। সরকার নিজেদের অপকর্ম থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে বিবেকবান, স্বাধীনচেতা লেখকদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি মুশতাকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশের তরুণ সমাজ জেগে উঠবে এবং দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক স্বাধীনতাসহ সুশাসন ও আইনের শাসন ফিরে আসবে। পাশাপাশি গত বছরের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে কারাবন্দি রাখার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তার মুক্তি দাবিতে তরুণদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহবান জানাচ্ছি এই লেখনির মধ্য দিয়ে-এই কলামের মধ্য দিয়ে।
এত এত কষ্ট বেদনার মধ্যেও গত ১ বছর ধরে ঘরে বসে বসে সংবাদ সম্মেলন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোনাচ্ছেন-‘ স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই কথা যেন কেবল কথা না থাকে, সে জন্য চলুন নিজেদেরকে নিজেরা রক্ষা করি, নিজেদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিজেরা কমাতে তৈরি হই রাজপথে-কাজপথে। যাতে আর কোন লেখককে প্রাণ দিতে না হয় জেলাখানায়, কোন ব্যক্তিকে জীবন দিতে না হয় সীমাহীন ঋণমুক্তির চিন্তায়...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি