খুলনার পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘের মালিকরা গেট দিয়ে এবং অবৈধভাবে ওয়াপদা রাস্তা কেটে লবণ পানি উত্তোলন করে মৎস্য চাষে অভিযোগ উঠেছে। লবণ পানি উত্তোলনে ফলে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের চক হিতামপুর বিলে দীর্ঘ ১২ বছরের বেশী সময় ধরে লবণ পানি তুলে মৎস্য চাষ চলে আসছে। কিন্তু ২০২০ সালের ১লা জানুয়ারি হইতে চরমলই, মেলেক পুরাইকাটি, গদাইপুর ও হিতামপুর গ্রামের জমির মালিকরা লবণ পানি উত্তোলন না করে মিষ্টি পানিতে ধান ও মৎস্য চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুয়ায়ী আইল সীমানা নির্ধারন করে স্যালো মেশিন স্থাপন করে মিষ্টি পানি উত্তোলনে ধান চাষ এবং পোনা মাছ ছেড়ে দেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ ঘের মালিক রাতের আঁধারে বিলের মধ্যে চিংড়ি ঘেরের নীতিমালা উপেক্ষা করে লবণ পানি উত্তোলন করছেন। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, লবণ পানি উত্তোলন করলে তাদের ধানের ফসল নষ্ঠ হবে এবং ছোট পোনা মাছ মারা যাবে। ফলে কৃষকরা আর্থীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। স্থানীয় কৃষক হাফেজ মতিয়ার রহমান জানান, এ বছর আমি ২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। বর্গা চাষি কাজী মুকুল জানান, আমি ১৫বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। গত বছর লবণ পানির কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আবদুল মান্নান গাজী জানান, গত বছরের ন্যায় এ বছর ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা কৃষকরা নিঃশ্ব হয়ে যাবো। এ ঘটনায় মুকুল মোড়ল, মান্নান, মো. আল মামুন, কাজী মুকুল উদ্দীনসহ স্থানীয় জমির মালিকরা চরমলই এলাকার মো. আজিজুল হক সানা (আকু), মো. সিরাজুল হক সানা ও চুকনগরের মো. সাইদুর রহমানে বিরুদ্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবুর নিকট প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সংসদ সদস্য অভিযোগটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত পূর্বক সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রেরণ করেছেন। এদিকে গতমাসে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আগামী দুই বছরের মধ্যে উপজেলাকে লবণ পানি মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু ঘের মালিকরা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্নস্থানে লবণ পানি উত্তোলনে ফলে ঘেরের পাশে যে সমস্ত ধানের জমি রয়েছে, সেই সমস্ত জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে। ফলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন তাদের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ও থানার ওসি মো. এজাজ শফী লবণ পানি উত্তোলনে অভিযোগ পেয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার গদাইপুর ইউপির চক হিতামপুর বিল সরেজমিনে পরিদর্শন করে লবণ পানি উত্তোলনের সত্যতা পান। এ সময় তিনি স্থানীয় বোরো চাষীদের পানি সরবরাহের গেট ওয়াপদা রাস্তা কেটে যে স্থানে গেট তৈরী করা হয়েছে সেই স্থানগুলি বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফসলি জমিতে লবণ পানি উত্তোলনে কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ করে তাহলে তাহার বিরুদ্ধে যথাযত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।