যশোর শহরের ১৫টি পয়েন্টে ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে প্রতি মাসে। ‘অবৈধ’ যানবাহনের তকমায় দীর্ঘদিন ধরে চালকদের জিম্মি করে এই চাঁদাবাজির মহোৎসব চলে আসছে। সম্প্রতি নতুন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার যোগদানের পর ইজিবাইকের চাঁদাবাজচক্র নির্মূলে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ইতোমধ্যে গত ১০ দিনে ৯ জন চাঁদাবাজকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৩ টি মামলা হয়েছে। পুলিশের এমন তৎপরতায় স্ব¯িতর নিঃশ্বাস ফেলেছেন দীর্ঘদিনের জিম্মি চালকরা।
চালকরা বলছেন, ইজিবাইকের চাঁদবাজচক্র নির্মূল করতে হলে এদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে কিছুদিন পর আবারও একই পরিস্থিতি বিরাজ করবে। এ ক্ষেত্রে জেলা পুলিশকে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।
জানা যায়, যশোর শহর ও শহরতলীতে অনুমোদিত ও অনুমোদনবিহীন প্রায় ৫ হাজার ইজিবাইক চলাচল করে। এসব ইজিবাইক শহরের মনিহার, চাঁচড়া মোড়, সদর হাসপাতাল মোড়, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, আরবপুর, ধর্মতলা, পালবাড়ি মোড়, মুড়লি মোড়, নড়াইল বাসস্ট্যান্ড, বকুলতলা, চৌরাস্তা, দড়াটানাসহ অন্তত ১৫টি পয়েন্টসহ শহরতলীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রী আনা-নেওয়া করে। আর এইসব পয়েন্টে ঘিরেই রয়েছে চাঁদাবাজচক্রের ফাঁদ। ইজিবাইক চালকদের জিম্মি করে দৈনিক ভিত্তিতে বিভিন্ন সংগঠনের নামে-বেনামে চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদাবাজচক্রের নেপথ্যের শক্তি হিসেবে কাজ করে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা ও প্রভাবশালীরা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধেও ভয় দেখিয়ে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
সব মিলিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ৫ হাজার ইজিবাইক থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও ইজিবাইক চালকরা অসহায় ছিল।
গত পহেলা মার্চ যশোরের নতুন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার যোগদানের পর ইজিবাইকে চাঁদাবাজিচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পুলিশের অভিযানে অন্তত ৯ চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল যশোর সদর উপজেলার জগমোহনপুর জগীপাড়ার মোড়ে সিদ্দিক ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে চাঁদা আদায়কালে ইজিবাইকে চাঁদাবাজচক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ছোট নোটবুক, আদায়কৃত চাঁদার টাকা, দুইটি প্লাস্টিকের লাল চেয়ার ও দুইটি বাঁশের লাঠি উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, জগমোহনপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিন মোল্লার ছেলে সোলায়মান বাদশা (৩২) ও কায়েতখালি গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে মারুফ হোসেন (৩৫)।
গত ৬ মার্চ সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি যাত্রিছাউনির সামনে সিএনজি ইজিবাইক স্ট্যান্ড থেকে ছাতিয়ানতলা গ্রামের আমীর হামজার ছেলে মাহমুদ হাসান (৪০) একই গ্রামের আবুল হোসেন সরদারের ছেলে ওহিদুল ইসলাম (৫০) ও চুড়ামনকাঠি গ্রামের মৃত আবদুল বারির ছেলে মাহাবুব হাসান দিপুকে (৪৭) আটক করা হয়।
৪ মার্চ সকালে শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্যের মোড় থেকে হাফিজুর রহমান ও ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের পালবাড়ি থেকে ইজিবাইক থেকে চাঁদা আদায় চক্রের দুই সদস্য পুরাতন কসবা পুলিশ লাইন টালিখোলা এলাকার মানিকের বাড়ির ভাড়াটিয়া মো¯তফার ছেলে কামরুল ইসলাম, একই এলাকার আবদুস সাত্তারের ছেলে জাহিদকে আটক করা হয়।
যশোর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি সোমেন দাশ জানান, ‘ইজিবাইকে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার স্যারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ৯ চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চাঁদাবাজ নির্মূলে পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজচক্র বিভিন্ন সংগঠনের নামে-বেনামে ইজিবাইক চালকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও শনাক্ত করছি। প্রথমত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে বন্ধ না হলে পরবর্তীতে তাদের আশ্রয়দাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধীর কোন দল নেই। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আইন প্রয়োগ করা হবে।
ডিবি ওসি সোমেন দাস বলেন, পুলিশ সদস্যদের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি জানা নেই। এসপি স্যারের নির্দেশ কোন পুলিশ সদস্যের চাঁদা আদায়ের সংশ্লিষ্টতা পেলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।