নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী লেংগুড়া ইউনিয়নের আদিবাসীরা নিজেদের জুম বলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো এক সময়। একসময় জুমই আদিবাসীদের প্রাণ ছিল। এই উপজেলার লেংগুড়া ইউনিয়নের আদিবাসীদের মধ্যে ধনীর তুলনায় গরীব পরিবারের সংখ্যা বেশি। জুম চাষের উপর ভিত্তি করে পাহাড়িদের জীবন ব্যবস্থা পরিচালিত হত এক সময়। পাহাড়ের এই দূর্গম এলাকায় শিক্ষার আলো দেখেনি অনেক আদিবাসী পরিবার। কিছু সংখ্যক পেলেও চাকরি জুটছে না এই আদিবাসীদের কপালে। যার কারণে নিজ ভূমিতে সকাল বেলা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাহাড়ে জুম কাঁটা, জুম কাঁটার পর আগুন দেওয়া আর চাষাবাদ করার মাধ্যমে প্রকাশ ঘটতো আদিবাসীরা কিভাবে কষ্ট করে জীবন যাপনের সংগ্রাম করে জীবিকা নির্বাহ করে যেতো। জুমে যখন নতুন ফসল উঠত তখন চাষীরা বিক্রয় করার জন্য বাজারে নিয়ে যেতো কিন্তু তখনও ন্যায্য দাম পেতো না, মাথার ঘাম ফেলানো সে আদিবাসী জুম চাষীরা। তাছাড়া সেটলার, বনবিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহনের ফলে জুমের সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে, এ ইউনিয়নের সমতলভূমির সংখ্যা খুবই কম বলে আদিবাসীদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ হলো মেঘালয় থেকে নেমে আসা নুড়ি পাথর ও বালু উত্তোলনের ওপর। অন্যদিকে সমতল ভূমি ও সেটলাররা জোরপূর্বক বেদখল করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে সেটলাররা চুক্তির আগে যে আদিবাসীদের ভূমি জোরপূর্বক বেদখল করেছে তার চেয়েও দ্বিগুণ চুক্তির পরে বেদখল করে নিয়ে গেছে।এখনও উন্নয়নের নামে চলছে ভূমি আগ্রাসন অথচ ১৯৯৭ সালের পাহাড়ী চুক্তির প্রধান শর্ত ছিলো হারানো ভূমি ফেরত দেয়া কিন্তু চুক্তির দীর্ঘ প্রায় ২ যুগ হলেও আজো চুক্তির সেই শর্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তাছাড়া আজ অবধি আদিবাসীদের রাজনৈতিক অস্ব্বীকৃতি তথা পরিচয় সংকটের সঙ্গে অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো ‘নিজভূমে পরবাসী’ হিসেবে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। আদিবাসীদের রাজনৈতিক পরিচয় সংকট ঐতিহাসিক ভাবে আজো নাগরিকত্বের প্রশ্নে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে উপেক্ষিতকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এমতাবস্তায় আদিবাসীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে আছে। একদিকে আদিবাসী অন্য দিকে ভূমি হারিয়ে আদিবাসীরা যাযাবরের ন্যায় জীবন যাপন করে যাচ্ছে। নিজ দেশে অসহায়ত্বের মত রয়েছে। গতকাল লেঙ্গুড়া ফুলবাড়ি বাংলাদেশ ভারত মেঘালয় সীমান্ত ১১৭২ নং পিলার সংলগ্ন সাত শহীদের মাজারে ঘুরতে গিয়ে গনেশ্বরী নদীতে মেঘালয় থেকে নেমে আসা বালু ও নুড়ি পাথর কুঁড়ানোর দৃশ্য চোখে পড়ে। হাটুজলে নেমে এই দারিদ্র আদিবাসীরা বালু থেকে চেলে চেলে নুড়ি পাথর উত্তোলন করছে। সারাদিন যেটুকু বালু পাথর উত্তোলন করে,তা বিক্রি করে কোনক্রমে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। এই সংগ্রামী জীবন যাপনের প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা প্রবীর সাংমাকে জিজ্ঞেস করিলে, তিনি আক্ষেপের সহিত বলেন, বড় দুঃখের বিষয় এই দূর্গম সীমান্তের অসহায় আদিবাসীদের ভাগ্যে এখনো সরকারের কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বঞ্চিত অবস্থায় জীবিকা নির্বাহে আমাদের এই সংগ্রামী জীবন যাপন করে যাচ্ছি।