আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এম.পি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সবার মাথাপিছু আয় দিন দিন বেড়েই চলছে। আমরা আগামীতে দেশকে আরো কিভাবে উন্নত করা যায় এ লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকার কারো কাছে মাথা নত করবে না। উন্নয়নের সবগুলো সূচক অর্জিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের যত অর্জন সবকিছু সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম।
বুধবার জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে কালাই সরকারী মহিলা ডিগ্রী কলেজ মাটে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে বেলুন, ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
প্রায় ৭ বছর পর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন বুধবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের জন্য শহরে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে ভরে গেছে। সকাল থেকে দলে দলে বিভিন্ন এলাকা হতে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে মিছিলের মাধ্যমে সম্মেলন স্থানে উপস্থিত হন।
সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সব সূচকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বে এখন বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয় সাফল্যের অর্জনর জন্য। বিদেশিদের কাছে এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আওয়ামী লীগ সরকার যতবার ক্ষমতায় এসে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন হয়েছে, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পুঙ্গু ভাতা, একটি বাড়ি একটি খামার, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করেছে। বছরের শুরুতে কোমলমতি শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়াসহ সার্বিক উন্নয়ন থেকে দেশবাসী কখনো বঞ্চিত হয়নি। আওয়ামী লীগ উন্নয়ন, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতারা প্রথম থেকে বলে আসছে বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবেন আর লাখ লাখ মানুষ মারা যাবেন। তারা আরও বলেছিলেন, সরকার করোনা প্রতিষেধক টিকা আনতেই পারবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। টিকা উৎপন্ন হওয়ার আগেই টিকা ক্রয় করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সেই টিকা বাংলাদেশে এসেছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা দেয়া অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগর সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার। আর বিএনপি দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে অগণতান্ত্রিকভাবে এসেছিল। সেনা ছাউনিতে তাদের জন্ম। বহু সৈনিকের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেছিলেন। বিএনপি হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। বিএনপি’র জন্মটাই অগণতান্ত্রিক। ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টদের নিয়ে দল গঠন করেছিলেন। আজকে যারা আমাদের বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলেন, তারা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করে নেতা। এ দেশের মানুষ দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিএনপিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বিএনপির জনপ্রিয়তা যে কমে গেছে এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের নেতাকর্মীরা যে নির্বাচনে অংশপ্রহণ করে ঘরের মধ্যে ঘুমান, তাদের প্রার্থীরাও যে ঘুমিয়ে থাকেন। কারণ বিএনপি’র যে পরিস্থিতি তাতে নেতাদের ওপর কর্মীদের আস্থা নেই।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, এই সরকারের সময় রাস্তা-ঘাট, সেতু নির্মাণ, স্কুল-কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ, পৌর ভবন ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ হয়েছে। এ দেশের গৃহহীনরা পেয়েছেন ঘর, দেশে দারিদ্রের হার কমেছে, বাংলাদেশের যত অর্জন হয়েছে তার সবগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।
উক্ত সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান রকেট। উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ¦ আঃ কাদের মন্ডল সম্মেলনে সভাপতিত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ-সম্পাদক ও কালাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. তৌফিকুল ইসলাম তালুকদার বেলাল-এর সঞ্চালনায় উপজেলা ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক-সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এ্যাড. সামছুল আরম দুদু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ-সম্পাদক মো. জাকির হোসেন মন্ডল।
আরও বক্তব্য রাখেন, জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোল্লা শামছুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি রাজা চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম হককালী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম.সোলায়মান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য কাজী রাব্বিউল হাসান মোনেম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ নাথ মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক-সম্পাদক ও কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিনফুজুর রহমান মিলন, উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ.ন.ম.শওকত হাবিব তালুকদার লজিক, উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক আবদুল বারি প্রামাণিক প্রমুখ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিকেল সাড়ে ৫টায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিনফুজুর রহমান মিলন সভাপতি নির্বাছিন হন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক ও মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ.ন.ম.শওকত হাবিব তালুকদার লজিক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ফজলুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে উপস্থিত কাউন্সিলদের ভোটা-ভুটির মাধ্যমে মো.ফজলুর রহমান’কে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয় ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক-সম্পাদক এস. এম. কামাল হোসেন।