দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের বিরোধ বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। বিবাদমান দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে বহুবার হামলা-পাল্টা হামলা, দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। মামলাও হয়েছে একাধিকবার। দু’পক্ষের বিরোধ মূলত ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে। দু’পক্ষের এক গ্রুপের দীর্ঘদিনের নেতৃত্বে ছিলেন খুলনা -৪ আসনের সাবেক এমপি ও গাজীরহাট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আলহাজ¦ মোল্লা জালাল উদ্দিন।
বর্তমানে ওই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলহাজ¦ মোল্লা জালাল উদ্দিনের জৈষ্ঠ পুত্র ও গাজীরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা আঃলীগের সহ-সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী হেলাল। অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোল্যা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু।
দীর্ঘদিন ধরে গাজীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আলহাজ¦ মোল্লা জালাল উদ্দিন। পরবর্তীতে তিনি এমপি নির্বাচিত হলে তার স্থলাভিষিক্ত হন তার ভ্রাতা মোল্যা আবদুর রউফ। গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলে আলহাজ¦ মোল্লা জালাল উদ্দিনের জৈষ্ঠ পুত্র মোঃ কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী হেলাল দলীয় মনোনয়ন লাভ করে নৌকা প্রতীক পান এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গত ইউপি নির্বাচনে মোল্লা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। ২০০৮ সালের ইউপি নির্বাচনে তিনি মোল্যা আবদুর রউফের কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।
আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য তৃণমূল থেকে গাজীরহাট ইউনিয়ন থেকে ৪ জনের নাম কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। এদের মধ্যে থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী হেলালকে দল মনোনয়ন দেয়।
১৩ মার্চ রাতে যখন এ সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তখন মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ মোল্যা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডুর সমর্থকদের উপর হামলা, দোকানপাট এবং বাড়িঘর ভাঙচুর শুরু হয়। মোল্লা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, মনোনয়ন লাভের পরই কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী হেলালের সর্মথকরা আমার সমর্থকদের উপর হামলা, দোকানপাট এবং বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। হামলায় বামন ডাঙ্গা গ্রামের বদরুল শেখের দোকান, কুদ্দুস শেখ, আজিবর শেখ এবং মিজান শেখের বাড়ি ভাংচুর করা হয়। ডোমরা দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ রায়ের দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া মাঝিরগাতি ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করা হয় এবং স্থানীয় যুবলীগ সদস্য জমির শেখকে মারধর করা হয়।বর্তমানে সে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।তিনি আরো বলেন, ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে গাজীরহাট ইউপি থেকে আমি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবো ইনশাআল্লাহ।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা হয় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোঃ কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী হেলালের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ১৩ মার্চ রাতে তিনি আঃ লীগের প্রার্থী মনোনীত হওয়ার সংবাদে তাঁর সমর্থকরা বামন ডাঙ্গায় আনন্দ মিছিল বের করে। এ সময় আনন্দ মিছিলটি ওই এলাকার বড় খালের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় মফিজুল ইসলাম ঠান্ডুর সমর্থকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল ঢাল, শড়কি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
এ সময় উভয় সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। হামলা এবং ভাংচুরের কোন ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, ওই এলাকায় বিএনপি-জামাতের কর্মীরাই বর্তমানে মোল্যা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডুর সমর্থক। ভাংচুরের ঘটনা তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আহসান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।এ ব্যাপারে ডোমরা গ্রামের জমির শেখের স্ত্রী জেসমিন বেগম ( ৩৫) বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ২০/২৫ জনের নামে দিঘলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ৬ তাং ১৫/০৩/২০২১। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি ডোমরা গ্রামের খাজা মিয়া (৫৫) কে গ্রেপ্তার করে কোর্টে প্রেরণ করেছে।