সবুজের আস্তরণে ফসলের মাঠ, কোথাও গাছে ফুল ফুটেছে, ডগায় ডগায় ফল এসেছে। যতই গাছে ফল ধরছে চাষীদের স্বপ্ন পূরণের আশায় তত বুক বাঁধছে। তপ্ত রোদে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণীরা তরমুজ ক্ষেত পরিচর্যায়। উপজেলায় দেলুটি ও গড়-ইখালী ইউনিয়ানের বিভিন্ন এলাকার তরমুজ চাষীদের এমন চিত্র। গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা তরমুজের বাম্পার ফলন আশা করছেন। ব্যাপক হারে ড্রাগন, সুইট ড্রাগন, পাকিজা, বীগ ফ্যামিলি, কালো মানিক সহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ বীজ বপণ করা হয়েছে। উপকূলবর্তী দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম লবণাক্ত এলাকা পাইকগাছায় বেশির ভাগ মৎস্য লীজ ঘেরে চিংড়ি চাষ। এখানে এক ফসলি জমিতে আমন ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল হতো না। কিছুদিন আগেও এসব জমিতে লবণাক্ত পানি থৈই থৈই করত। লবণাক্ত পানি বন্ধ হলে পরে ওই সব জমিতে তিল ও মুগ চাষ শুরু হয়। গড়ইখালী ইউনিয়নে আমনের এক ফসল হতো। বাকী সময়ে পতিত থাকতো। গত দু’বছর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিল চাষ বাদ দিয়ে কৃষকেরা তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়েন। জমিতে ভালো ফলন হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যে কারণে তরমুজকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন হাজারও কৃষক। লবণাক্তর করালগ্রাসে দক্ষিণাঞ্চলে পতিত থাকতো হাজার হাজার হেক্টর জমি। দু’বেলা খেয়ে জীবন চলত বেশির ভাগ কৃষকের। পাইকগাছা কৃষি কর্মকর্তার দিক নির্দেশনায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রদীপ পোদ্দার, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাধক ঢালী, মো. ইয়াছিন আলী, উত্তম কুমার কুন্ডু সহ মো. শাহীনুল ইসলামের বারবার পরামর্শ, আলোচনা সভা ও বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত ছুটে চলার কারণে প্রায় ১১শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এই লাভজনক চাষে উপজেলার এ দু’টি ছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নের চাষিরাও ঝুঁকছেন। তরমুজের জীবনকাল ৯০-১২০ দিন। তবে ফল ধরা শুরু হয় ৬০ দিন পর থেকে। এই উপজেলায় ব্যাপকহারে ড্রাগন, পাকিজা, বীগ ফ্যামিলি, কালো মানিক জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি চাষ হচ্ছে ড্রাগন ৫০শতক, সুইট ড্রাগন ২৫শতক, পাকিজা ২৩শতক ও অন্যান্য ২শতক। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিন্টু রায়সহ অন্যরা জানান, গত বছর এ উপজেলায় তরমুজ চাষ হয়েছিলো ৫১০হেক্টর জমিতে। এ বছর চাষ হচ্ছে তার দ্বিগুণ।
দেলুটি ইউনিয়নে ১হাজার এবং গড়ইখালী ১শত মোট ১১০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। বিঘা প্রতি খরচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতি হেক্টরে খরচ পড়ে ১ লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। সঠিকভাবে চাষাবাদ করলে হেক্টর প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ মেট্রিকটন ফসল উৎপাদন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় ২ লাখ টাকা বিক্রি হতে পারে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন উপজেলাব্যাপী প্রায় ২২ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে। দেলুটি ইউপির কালিনগরে পরিতোষ, সেবনেরবেড় হিরেন্ময় ও গোপীপাগলা গ্রামের প্রহ্লাদ এবং গড়ইখালী ইউপির আমেরপুর মিল্টন, গৌতম সানা, বাইনবাড়িয়ার বীরেন্দ্রনাথ, গোবিন্দ, উত্তম, শান্তার শফিকুল ইসলাম, কুমখালী দিলীপ ঢালী ও ব্যাসদেব কবিরাজ, হোগলারচক গ্রামের মলয় তরমুজ চাষীরা বলেন, খুলনায় তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত পাইকগাছায় এবারও ব্যাপক হারে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। এলাকার তরমুজ খুব মিষ্টি। বাজারে চাহিদাও ব্যাপক। গত বছর করোনার কারণে ন্যায্য দাম পাননি চাষিরা। এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আশা করছেন। তারা দুই বিঘা থেকে দশ-বারো বিঘা জমিতে এবার তরমুজের বীজ বপন করেছেন। মিষ্টি পানির অভাবে এবার জমিতে ঠিকমত পানি দিতে পারছে না। এ ব্যাপারে সমাধানে কৃষি অফিসারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তরমুজের বাম্পার ফলন হবে। কৃষক তাদের ন্যায্য মূল্যে ফসল যাতে লাভজনক অবস্থায় ঘরে তুলতে পারে সেজন্য কৃষি বিভাগ সব সময়ই সহযোগীতা করছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি সমস্যার সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।