ভাঁটফুল, গ্রাম বাংলার মাঠে ঘাটে, আনাচে-কানাচে জন্ম নেওয়া অতি পরিচিত গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবি এক বুঁনো উদ্ভিদের নাম। যার ফুলের সৌন্দর্য পথচারীকে মুগ্ধ করলেও, কবির কবিতায় যার ঠাঁই হলেও অন্য ফুলের মতো ভাঁট ফুলকে দেখা হয় না। অথচ হলফ করে বলতে পারি ভাঁটফুলের সৌন্দর্য অন্য নামী-দামী ফুলের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ভাঁটফুলের উল্ল্যেখ আছে। পাবনার বেড়া উপজেলার আনাচে-কানাচে ফুঁটেছে ভাঁটফুল। পুষ্পপ্রেমিকের চোখ সেই রুপে আটকাতে বাধ্য।
কবির ভাষায় যেন সত্যি হয়, দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া.....। ঘর থেকে বের হলেই একসময় ঝোপের মতো অসংখ্য ভাঁট গাছে থোকায় থোকায় ফুল ফুটে থাকার দৃশ্য দেখা যেত। জানা যায়, এক এক অঞ্চলে এই ফুলের রয়েছে নামের ভিন্নতা। কোথাও ভাঁট ফুল, কোথাও ভাইটা, কোথাও ঘেঁটুফুল, বনজুঁই,ভাঁটি ফুল এসব নামে ডাকা হয়। যে নামেই ডাকা হোক ফুল তার সৌন্দর্য একই রকমভাবে বিলিয়ে যায়। বসন্তের দোলায় যখন আর সব ফুল ফুঁটতে থাকে তখন ফাল্গুন থেকে চৈত্র মাসে ভাঁট ফুলের সমারোহ বেশি চোখে পরে। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ক্লেরোডেনড্রাম ভিসকোসাম। ইংরেজি নাম হিল গ্লোরি বোয়ার ফ্লাওয়ার। ভাঁট ফুলের আদি নিবাস ভারতবর্ষ,বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অঞ্চলে। ভাঁট গাছের প্রধান কান্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান থাকে। সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুস্পদন্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ির রং সাদা। এতে বেগুনি রংয়ের মিশ্রণ আছে। দুই ধরনের ফুল দেখতে পাওয়া যায়। ভাঁট ফুলের গন্ধ কিন্তু অন্য সুগন্ধি ফুলের চেয়ে কম নয়! বেশ মিষ্টি সুবাস ছড়ায়। কীট পতঙ্গ সারাক্ষণ লেগে থাকে ফুলের পেছনে। আর মানুষ? অবহেলাই করে! ভাঁট পাতা এবং ফুল দুটোরই রয়েছে ঔষুধি গুণ। অবহেলায় পরে থাকা একটি গাছ কতই না উপকারী এই মানব সমাজের জন্য।