বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদ, সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও দেশ বরেণ্য আলেম মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহী---রাজেউন)। বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাষ্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি ৩ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার পরিবারের সদস্য মুফতি নিজামুদ্দীন জানান, তিনি হার্ড, কিডনি এবং ফুসফুসে সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ভুগছিলেন। তিনি গত ২২ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি হন। এরপর তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে সেখান থেকে নেওয়া হয় মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রেলিভার ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল সাড়ে ৪টার দিকে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছেন।
মরহুম মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের ভাইপো শরিফুল ইসলাম শরিফ জানান, মাগরিববাদ তাঁর হাতে গড়া জামেয়া ইমদাদিয়া মাদানীনগর কওমি মাদ্রাসা ময়দানে নামাজে জানাযা শেষে মাদ্রাসা বাউন্ডারিতে তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হয়। তিনি কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের সহ-সভাপতি ও হেফাজত ইসলামের সাবেক নায়েবে আমীর এবং বর্তমানে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে একাংশের চেয়ারম্যান এবং নিজের প্রতিষ্ঠিত জামেয়া ইমদাদীয়া মাদানীনগর কওমী মাদ্রাসার মুহতামিম হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ১৯৫২ সালের ১লা নভেম্বর যশোরের মণিরামপুর পৌর এলাকার বিজয়রামপুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারের জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত. মোহাম্মদ ইসহাক মোড়ল ছিলেন একজন কৃষক। স্থানীয় সুন্দলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পাশ করে লাউড়ী রামনগর কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। তার প্রখর মেধা ও দ্বীনি শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে মাদ্রাসার তৎকালিন সুপারন্টিডেন্ট হযরত মাওঃ তাজাম্মুল হুসাইনের নেক নজরে পড়েন। মুফতি ওয়াক্কাসকে তিনি ব্যাপক স্নেহ করতেন। এক পর্যায় হযরত মাওঃ তাজাম্মুল হুসাইন সাহেবের বায়াত নিয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহন করেন।
তিনি (মাওঃ তাজাম্মুল হুসাইন সাহেব) ছিলেন উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারি। মুফতি ওয়াক্কাসও দেওবন্দ ভাবাপন্ন হয়ে উঠেন। এই মাদ্রাসা হতে মাদ্রাসা বোর্ডের মেধা তালিকায় সাফল্য অর্জন করে দাখিল, আলিম ও ফাজিল পাশ করেন। ১৯৭১ সালে মাদারিপুর জেলার বাহাদুরপুর শরীয়তীয়া আলীয়া মাদ্রাসা থেকে প্রথম শ্রেনিতে কামিল পাশ করেন। ১৯৭২ সালে মণিরামপুর ডিগ্রী কলেজ (বর্তমান সরকারি) থেকে এইসএসসি পাশ করে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সাথে মওকুপ আলাইহি, দাওরায়ে হাদিস, তাকমিলে দ্বীনিয়াত ও মেধা তালিকায় প্রথম স্থান করে ইফতা পাশ করেন।
তিনি বাড়িতে ফিরে এলে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অনুরোধে ও হযরত মাওঃ তাজাম্মুল হুসাইনের সম্মতি নিয়ে ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হয়ে তৎকালিন শাসক দল জাতীয়পার্টিতে যোগ দিয়ে প্রথমে জাতীয় সংসদের হুইপ এবং পরে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী হন। পরে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের মহাসচিব ও সভাপতি হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাথে জোট হলে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, যশোর জেলা জামায়াতের ইসলামের কর্ম পরিষদের সূরা সদস্য এ্যাড. গাজী এনামুল হক, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার সেলিম অগ্নি, যশোর জেলা বিএনপির নেতা আলহাজ¦ মুহাম্মদ মুছা, মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র এ্যাড. শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. মকবুল ইসলাম, মণিরামপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারুক আহমেদ লিটন, সম্পাদক মোতাহার হোসেন, যুবদলের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টুসহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ।
অপর দিকে মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের মৃত্যুতে এলাকায় শোকে ছায়া নেয়ে পড়েছে।