দেশের সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া হলেও বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না। বরং সংস্থাটি স্থাবর স্থাপনাগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক স্থাপনা, বহুতল ভবন নির্মাণ ও ভাড়া প্রদানের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি অব্যবহৃত জমি কৃষি ও বাণিজ্যিকভাবে ইজারা প্রদানের মাধ্যমেও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ফলে ইজারার মাধ্যমে সরকারি জমি নিয়ে অপব্যবহার রোধ, বেদখল হয়ে যাওয়া রোধ এবং বেদখল ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে বিজেএমসি সংশ্লিষ্টরা মনে করছে। বিজেএমসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় সরকারি ২৫টি পাটকল গত বছরের জুনে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তারপর বন্ধ ওসব পাটকল সম্প্রতি বিজেএমসির তত্ত্বাবধানে সীমিত আকারে বেসরকারি পর্যায়ে ইজারার মাধ্যমে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই প্রেক্ষিতে দেশের একাধিক বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে দেশের প্রায় প্রতিটি বন্ধ পাটকল পরিদর্শন করেছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সরকারি বন্ধ মিলগুলো ভাড়াভিত্তিক ইজারা পদ্ধতিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পুনঃচালুর বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি ইতিমধ্যে সরকারি কর্তৃত্ব রেখে বন্ধ পাটকলগুলো ইজারা প্রদানের নীতিমালা ও শর্ত চূড়ান্ত করেছে। এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ শিগগিরই ইজারা-সংক্রান্ত দরপত্রে যাবে।
সূত্র জানায়, সারা দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি সরকারি পাটকলের সর্বমোট জমির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২৩৪ একর। বেসরকারি মিলমালিকদের বিপুল ওই জমির প্রয়োজন হবে না। কারণ সরকারি মিলের ক্ষেত্রে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আবাসন, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অব্যবহৃত অনেক জমি রয়েছে। বেসরকারি খাতে শুধু উদ্যোক্তাদের কাছে চাহিদামতো জমি ও ভবন ছেড়ে দেয়া হবে। পাশাপাশি বিজেএমসির মালিকানাধীন মিলের অফিস ভবনও ইজারা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে ছেড়ে দেয়া হবে। তবে বিজেএমসি মিলের অভ্যন্তরে নতুন স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য তদারককারী অফিস স্থানান্তর করবে। পাশাপাশি বিজেএমসির টেকনিক্যাল টিম ইজারাকৃত পাটকলে একটি অফিস করবে। আর বিজেএমসির মিল এলাকায় স্থানীয় অফিসের কাছে বেসরকারি মিল কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট করবে। পাশাপাশি ইজারা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান পাটকল ও পাটজাতীয় পণ্য উৎপাদন-সংক্রান্ত বিজেএমসির পুরনো দক্ষতাকে কাজে লাগাতে সহায়তা নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে দেশের ২৫টি মিল এলাকায় বিজেএমসি একটি টেকনিক্যাল টিম বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত মিলের উৎপাদন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
সূত্র আরো জানায়, সরকারিভাবে পরিচালিত মিলগুলো যুগের পর যুগ লোকসানে থাকায় পাট খাতের উন্নয়নে নতুন ধরনের পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা পাট খাতের উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রমে থাকবে। অপরদিকে গবেষণা, দক্ষতা ও নীতি দিয়ে সহায়তা করবে সরকার। বিজেএমসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মনিটরিং করতে ইতিমধ্যে নতুন একটি প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে বিজেএমসি। ফলে আশা করা যায় সরকারি সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে অপব্যবহার রোধ করার মাধ্যমে পাট খাতের বিকাশে বিজেএমসি আগের চেয়েও অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে।
এদিকে সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণার পর শুরুতে বিজেএমসি প্রায় ৮০ হাজার স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিকের ৯০ শতাংশ পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। আর বর্তমানে বিজেএমসিতে কর্মরত লোকবলের সংখ্যা ২ হাজার ৯৫৪ জন। তার মধ্যে কর্মচারী ১ হাজার ৯০২ জন এবং কর্মকর্তার সংখ্যা ১ হাজার ৫২ জন। শুরুতে বিজেএমসি বিলুপ্তি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ইজারা-সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ায় সেখানে বিজেএমসিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল বেসরকারি মালিকানায় পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থায় রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সংস্থায় দক্ষ লোকবল নিয়োগ ছাড়াও পাট খাতের একটি তদারককারী সংস্থায় পরিণত করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারি বন্ধ পাটকল ইজারা প্রদানের বিষয়ে বিজেএমসির চেয়ারম্যান ও ইজারা-সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য সচিব মো. আবদুর রউফ জানান, বিজেএমসি ইজারা-সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিমালা, শর্ত ও আনুষঙ্গিক নথি চূড়ান্ত করেছে। সরকারের সবুজসংকেত পেলেই ইজারা প্রদানের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। মিল পর্যায়ে এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট (আগ্রহ ব্যক্তকরণ) পাওয়ার পর একটি শর্টলিস্ট প্রস্তুত করা হবে। আর বাছাইকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব গ্রহণের পর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন শেষে চূড়ান্তভাবে পাটকলগুলো বেসরকারি উদ্যোক্তার কাছে ইজারা দেয়া হবে।