পুকুর পুনঃখনন নামে দুটি প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে ৪ লাখে কাজ শেষ দেখিয়ে বিল উত্তোলনের চেষ্টা করে চলেছেন জামাই-শ্বশুর দু’জনে। শ্বশুর মণিরামপুর উপজেলা কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক আবুল ইসলাম এবং জামাই আইনুল ইসলাম। শ্বশুর-জামাই এ দু’জনে মিলে পৃথক দু’টি প্রকল্পের সভাপতি জামাই এবং অপরটির ঠিকাদার শ্বশুর আবুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্র জানায়, মৎস্য অধিদপ্তরের জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় মণিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের বাগবাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুকুর পুনঃখননে ১২ লাখ ৪৪ হাজার এবং একই ইউনিয়নের হায়াতপুর পুকুর পুনঃখননে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। হায়াতপুর পুকুর পুনঃখনন কাজের ঠিকাদার উপজেলা কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক আবুল ইসলাম এবং বাগমারা পুকুর পুনঃখননের সভাপতি জামাই আইনুল ইসলাম। এ দু’টি প্রকল্পের কাজই চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু করা হয় এবং ৩১ মার্চ কার্য্য সমাপ্তির সম্ভাব্য তারিখ ধার্য্য থাকে। এরমধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে বলে দুই প্রকল্পের ঠিকাদার ও সভাপতি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, দু’টি প্রকল্পে খরচ হয়েছে মাত্র ৪ লাখ টাকা। স্কেভেটর মেশিন (মাটি কাটা) দিয়ে পুকুর পাড়ের ঢাল ছেটে পাড় বাঁধা হয়েছে। বাগমারা পুকুর পুনঃখননে স্কেভেটর মেশিন (মাটি কাটা) দিয়ে ১’শ ঘন্টা মাটি কাটা হয় এবং হায়াতপুর পুকুর খননে মাত্র ৩০ ঘন্টায় মাটি কেটে সম্পান্ন করা হয়। দু’টি পুুকুরের তলায় কোন মাটি কাটাকাটির কাজ হয়নি বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছে।
স্কেভেটর চালক জসীম উদ্দীন জানান, প্রতিঘন্টা ২ হাজার টাকার চুক্তিতে বাগমারা পুকুর খননে ১’শ ঘন্টা মাটি কাঁটার কাজ করা হয়েছে। অপরটি হায়াতপুর পুকুর খনন কাজে প্রতি ঘন্টা ২৫’শ টাকা চুক্তিতে ৩৫ ঘন্টা মাটি কাঁটার কাজ করা হয়েছে বলে স্কেভেটর চালক উজ্জ্বল জানিয়েছে।
পুকুর পাড়ের মাটি সমান করতে বাগামারা পুকুরে দৈনিক ৫ জন শ্রমিক ১৬ দিন এবং অপরটিতে সমান সংখ্যক শ্রমিক ৫ দিন কাজ করেছেন। সিডিউল অনুযায়ী পুকুর পাড় থেকে ৫ ফুট ঢালুর উপর পরে আরও ৫ ফুট ঢালুর কাজ করে ৮ ফুট চওড়ার পাড় বাধানোসহ পুকুরের তলায় গড়ে ২ থেকে ৬ ফুট গভীর করার কথা থাকলেও সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। কিন্তু সেখানেও শুভংকরের ফাঁকি দেয়া হয়েছে। পুকুর পাড়ের ব্যক্তি মালিকানা জমিতে মাটি ছিটিয়ে পাড় বাঁধানো দেখানো হয়েছে। এজন্য শাহাজানহান নামের এক জমি মালিক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও করেছেন।
শাহাজাহান জানান, পুকুর খননের নামে এমন দূর্নীতি আগে কখনো আমি দেখিনি। তার নিজের জমির উপর মাটি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পাড় বাঁধা দেখানো হয়েছে। যা একটু বৃষ্টি হলেই বোঝা যাবে।
শ্রমিক আনোয়ার হোসেন, ফারুক হোসেন, শিমুল হোসেন, শহিদুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, ৩’শ টাকার দিন চুক্তিতে বাগমারা পুকুরে ২২ দিন এবং অপরটিতে মাত্র ৫ দিন কাজ করে শেষ করা হয়েছে।
এ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের এস্টিমেড অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদার। এই প্রকল্পের প্রকৌশলী গৌতম সাহা জানান, পুকুর পুনঃখনন কাজের চূড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়নি। সামান্য ত্রুটি আছে যা ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
হায়াতপুর পুকুর পুনঃখনন প্রকল্পের ঠিকাদার আবুল ইসলাম জানান, সিডিউল অনুযায়ী কাজ শেষ করা হয়েছে, এখন বিল উত্তোলনের প্রক্রিয়া চলছে, অপরটি বাগমারা পুকুর পুনঃখনন প্রকল্পের সভাপতি জামাই আইনুল ইসলাম জানান, মৎস্য অফিসের নির্দেশনা মেনেই কাজ করা হয়েছে।