কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ ইউনিয়নের জগৎসাবাড়ির চারশত বছরের প্রাচীন পুকুর ভরাটের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিবেশ আইনে করিমগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে পুকুর ভরাটের সত্যতা পাওয়ায় বুধবার আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোঃ আবু সাঈদ।
তিনি জানান, পরিবেশ আইনকে তোয়াক্কা না করে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুতিতে পুকুর ভরাট করে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করার অপরাধে ২০২০ সালের ২৯ জুন মামলা (নং-২৭/১৫৪) দায়ের করা হয়। এতে জাফরাবাদের মৃত আঃ মন্নাফের ছেলে নুরুল ইসলাম (৫০), আঃ গফুরের ছেলে মোঃ মান্নু (৫১), মানিক নগর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মানিক সরকার (৫০), কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের সাইটুটা গ্রামের মৃত ইসমাঈলের ছেলে ইউনুছ আলী (৪৫), পুর্ব পাটধা গ্রামের শুকুর মামুদের ছেলে এখলাছ ওরফে এলাজ মিয়া (৩৮) এর বিরুদ্ধে পুকুর ভরাট কাজের সাথে সংযুক্ত মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ মৌজার আর. এস ২৮০, ৪১৭নং খতিয়ানের, ১২৪১নং দাগে অবস্থিত নিদের্শনা অমান্য করে পুকুর শ্রেণি মাটি/বালু দ্বারা ভরাট করে শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৪(২) (৩) ও ৬(ঙ) লংঘনজনিত অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয়েছে, যা একই আইনের ১৫(১) এর টেবিলের ১নং ও ৮নং ক্রমিক মোতাবেক বিচার্য। সুতরাং বিজ্ঞ আদালতে সুপরিশকৃত ধারায় তাহাদের বিচার প্রার্থনা করছি।
প্রসঙ্গত করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ ইউনিয়নের জগৎসাবাড়ি মোড় থেকে ১০০ গজ দক্ষিণে জাফরাবাদ মৌজায় ৮২ শতাংশের একটি পুকুর নিয়ে এই মামলা। গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে জাফরাবাদের মৃত আঃ মন্নাফের ছেলে নুরুল ইসলাম (৫০), আঃ গফুরের ছেলে মোঃ মান্নু (৫১), মানিক নগর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মানিক সরকার (৫০), কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের সাইটুটা গ্রামের মৃত ইসমাঈলের ছেলে ইউনুছ আলী (৪৫), পুর্ব পাটধা গ্রামের শুকুর মামুদের ছেলে এখলাছ ওরফে এলাজ মিয়া (৩৮) এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পুকুরটিতে মাটি ও বালু ফেলে ভরাট করে ফেলছিল। চার শত বছরের প্রাচীন এ পুকুর ভরাটের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও পরিবেশ রক্ষা মঞ্চ (পরম) মানববন্ধন ও সংশ্লিষ্টদের বরাবরে স্মারকলিপি দেয়। এ নিয়ে ফলাও করে সাংবাদিক আমিনুল হক সাদী স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে সাধের জঙ্গল গ্রামের তানভীর আহমেদ গত বছরের ২০ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয় বরাবর পুকুর ভরাটের অভিযোগ জানান। এর প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আবু সাঈদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুর ভরাটের সত্যতা পান। পরে পুকুর ভরাট বন্ধ করার জন্য একাধিকবার নোটিস দেন। সর্বশেষ গত ২৪ জুন পুনরায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখেন ভরাটকৃত পুকুরের মাটি ও বালু অপসারণ করেননি। পুকুর ভরাটে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করায় গত বছরের ২৯ জুন মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘদিনমামলাটি তদন্ত করে বুধবার আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।