মেডিকেলে ভর্র্তির চান্স পেয়েও হতাশ দিনমজুর পরিবারের সন্তান ইসমাইল। দুবেলা দুমুঠো যাদের পেট ভরে খাবার জোটেনা, তাদের সন্তানকে মেডিকেলে ভর্র্তির টাকা জোগার করাই দু:সাধ্য হয়ে পরেছে। বৃদ্ধ পিতার আয়ে কোন রকমে চলছে তাদের সংসার। মাঝে মধ্যে ইসমাইলকেও দিনমজুরের কাজ করতে হয়।
প্রচন্ড ইচ্ছে শক্তি, আর অদম্য মেধাবী ইসমাইলের বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলার মোমেসেপাড়া। তার বাবার নাম নুরুল ইসলাম বেপারী। ইসমাইল তার বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্রসন্তান। ইসমাইলের আরও তিনটি বড় বোন আছে।
ইসমাইল দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে তিনি মেডিকেলে পড়তে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রচন্ড ইচ্ছে শক্তি, অদম্য মেধা ও পরিশ্রমের ফলে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে জন্ম নিয়েও দমে যায়নি ইসমাইল। মেডিকেলে ভর্র্তির সুযোগ পেয়েও তার মুখের হাসি মলিন। পড়াশোনার খরচ কীভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। প্রয়োজনীয় অর্র্থের অভাবে তার মেডিকেলে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইসমাইল তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.৯১ পেয়ে এসএসসি এবং তালতলী সরকারি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
২০১৯ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সুযোগ পান; কিন্তু গত বছরের ফল আশানুরূপ না হওয়ায় ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় আবারও অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ অর্জন করেন।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেডিকেলে সুযোগ পান।
তার বাবার একার আয়ের ওপর নির্ভর করেই চলে তাদের সংসার। এ অবস্থায় ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তার বাবাকে। ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা তার নেই।
বিত্তবান মানুষের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চেয়েছেন। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাস নিজ বাড়িতেই রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন ইসমাইল। তার সাফল্যে খুশি পরিবারসহ এলাকার সবাই।
ইসমাইল বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তি সুযোগ পেয়েছি। এজন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া, কিন্তু আমি মনে হয় ডাক্তারি পড়তে পারব না, আমাদের আর্থিক অবস্থা এতই নাজুক, বাবার পক্ষে আমার লেখাপড়ার খরচ চালানো অসম্ভব।
কোনো স্বহৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমার লেখাপড়া করার জন্য সাহায্য করতেন তা হলে আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতো। আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, যেন পড়াশোনা শেষ করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষের সেবা করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আকুল আবেদন জানাচ্ছি, তিনি যেন আমার লেখাপড়া চালানোর দায়িত্ব নেন। তার সহযোগিতা ছাড়া আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমি সরকারের সহযোগিতায় পড়াশোনা সম্পন্ন করে ভালো একজন চিকিৎসক হতে চাই।
ইসমাইলের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, আমি একজন হতদরিদ্র কৃষক, আমার বাড়ির জমিটুকু ছাড়া আর কোনো কিছু নেই। আমার ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। কিন্তু আমার কাছে টাকা-পয়সা নেই যে, আমার ছেলেকে ডাক্তারি পড়াব। আমি গরিব মানুষ দিন আনি দিন খাই। কোনোরকমে সংসার চলে।
এর আগে ছেলেকে ঠিকমতো পড়ালেখার খরচ দিতে পারিনি। না খেয়ে লেখাপড়া করেছে আমার ছেলে, এখন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে কেমনে কীভাবে পড়াব আল্লাহই জানে।
এবিষয় তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাওসার হোসেন বলেন, আমি শুনেছি ইসমাইল নামে এক মেধাবী ছাত্র দিনাজপুরের মেজর আ. রহিম মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। আমরা খুবই আনন্দিত।
। সমাজে যারা বিত্তবান আছেন, তারা যদি ইসমাইলকে সহযোগিতা করেন আমার মনে হয় ছেলেটি একজন ভালো চিকিৎসক হতে পারবে।
তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজবি উল কবির জমাদ্দার বলেন, আমি তাকে অভিনন্দন জানাই, সে তালতলী উপজেলার ছেলে হিসেবে মেডিকেলে ভর্র্তির সুযোগ পেয়েছে, তার ভবিষ্যৎ উন্নতি কামনা করি।