সারা বিশ্ব আজ করোনা বা কোভিড-১৯ যা শ্বাস যন্ত্রকে আক্রমণ করছে। অনেক মানুষের মৃত্যুও হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রয়াত ডাঃ মোঃ হারুন-অর-রশীদ, এম.এ.ডিপ-ইন্-এড; এম.বি, এইচ (কলিকাতা) তাঁর লিখে যাওয়া “হোমিও আরোগ্য বিধান” এর ত্রিশটি অধ্যায়ের মধ্যে নবম অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে শ্বাস যন্ত্রের কি কি রোগ হতে পারে সে সম্বন্ধে লিখেছেন এবং লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করেছেন।
তিনি শ্বাসযন্ত্র (ফুসফুস) এর এগার প্রকার রোগ সম্বন্ধে লিখেছেন। যেমন:
(১) সর্দি-জ্বর, (২) স্বরযন্ত্র প্রদাহ, (৩) স্বরভঙ্গ, (৪) হিক্কা, (৫) শ্বাসনালীর প্রদাহ, (৬) ফুসফুস আবরক ঝিল্লি প্রদাহ, (৭) ফুসফুস প্রদাহ, (৮) কাশি, (৯) হাঁপানি, (১০) রক্তকাশ, (১১) যক্ষ্মাকাশ।
১। সর্দি-জ্বর (Catarrh) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য তেরটি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয়: ঠান্ডা লাগা, জলে ভিজা, নাকের ভিতরে ধুলিবালি প্রবেশ করা, ঋতু পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে নাসিকা, গলদেশ, বক্ষদেশ, বক্ষঃস্থল অথবা কপালের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীসমূহের প্রদাহ জন্মিয়া হাঁচি ও কাসিসহ নাসিকা হইতে তরল স্রাব নিঃসরণ হইলে তাহাকে সর্দি বলে। এই পীড়ার তরুণ অবস্থায় শীতভাব, সামান্য জ্বর, গা ও মাথায় জ্বালা ও ব্যথা, স্বরভঙ্গ প্রভৃতি উপসর্গ বিদ্যমান থাকে। সর্দি পুরাতন আকার ধারণ করিলে নাসিকা বুজিন্না থাকা, রজ্জুবৎ অথবা দুর্গন্ধ ও রক্তযুক্ত সর্দি নিঃসরণ স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তির লোপ প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। সর্দিসহ শ্বাসকষ্ট থাকিলে দুধ ও চিনি মিশ্রিত গরম জল পান ও নাসিকা দিয়া গরম জলের বাষ্প গ্রহণ হিতকর।
২। স্বরযন্ত্র প্রদাহ (Laryngitis) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য চৌদ্দটি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয়: শ্বাসনালীর অগ্রভাগের ত্রিভুজাকৃতি উচ্চ অংশের নাম স্বরযন্ত্র। এই স্বরযন্ত্র প্রদাহান্বিত হইলে উহার অভ্যন্তরস্থ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীসমূহ স্ফীত ও চটচটে শ্লেষ্মাযুক্ত হয় এবং সেই সঙ্গে গলদেশে সুড়সুড়ি, বেদনা ও জ্বালাবোধ, অবিরাম শুস্ক ঘঙঘঙে কাশি, সুতার মত শক্ত শ্লেষ্মা নিঃসরণ স্বরভঙ্গ বা স্বরলোপ, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, পিপাসা প্রভৃতি উপসর্গ বর্তমানে থাকে। ঠান্ডা লাগা, বৃষ্টিতে ভিজা, শ্বাসপথে ধূলা, ধুম্র বা কোন প্রকার উত্তেজক গ্যাস প্রবেশ করা, উচ্চৈঃস্বরে গান গাওয়া বা বক্তৃতা করা, আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে স্বরযন্ত্রের প্রদাহ জন্মিয়া থাকে।
৩। স্বরভঙ্গ (Aphonia) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য এগারটি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয়: আমাদের স্বরযন্ত্রের সম্মুখভাগে স্বরতন্ত্রী অবস্থিত। এই স্বরতন্ত্রীর সন্নিহিত পেশীসমূহের সাহায্যে স্বরোৎপত্তি হইয়া থাকে। ঠান্ডা লাগা, গান গাওয়া, উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার বা বক্তৃতা করা প্রভৃতি কারণে স্বরযন্ত্র পেশীর পক্ষাঘাত জন্মিয়া কন্ঠস্বর বিকৃত হইলে তাহাকে স্বরভঙ্গ বলে। এই পীড়ার সহিত গলায় সুড়সুড়ি শুস্ক, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি উপসর্গ বিদ্যমান থাকে। ইহাতে গলায় গরম কাপড় জড়াইয়া রাখা এবং গরম দুধ বা চা পান করা হিতকর।
৪। হিককা বা হেঁচকী (Hiccup) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য নয়টি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয়: বক্ষোদর ব্যবধায়ক পেশীর এবং শ্বাসনালীর দ্বারের আক্ষেপিক আকুঞ্চনবশতঃ শ্বাস গ্রহণের সময় স্বরযন্ত্র মুখে হিক হিক করিয়া যে শব্দ উত্থিত হয়, তাহাকে হিককা বা হেঁচকী বলে। অজীর্ণতাদোষ বা ঠান্ডাজনিক হিক্কায় ভয়ের কিছুই নাই, কিন্তু যক্ষ্মা, টাইফয়েড, কলেরা, হিষ্টিরিয়া প্রভৃতি পীড়ার উপসর্গরূপে হিককা উঠা অতিশয় কুলক্ষণ। অস্ত্রোপচারের পর এই কষ্টদায়ক উপসর্গ উপস্থিত হইলে নাড়ী লুপ্ত হইয়া প্রায়ই মৃত্যু ঘটিয়া থাকে।
৫। শ্বাসনালীর প্রদাহ (Bronchitis) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য চৌদ্দটি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয়: ঠান্ডা লাগা, জলে ভিজা, আবহাওয়ার পরিবর্তন, নিশ্বাসের সহিত দূষিত পদার্থ প্রভৃতি কারণে শ্বাসনালীর শ্লৈষ্মিক-ঝিল্লীর প্রদাহ জন্মিতে পারে। হাম, বসন্ত, হুপকাশ প্রভৃতি পীড়ার সহগামীরূপে প্রায়ই শ্বাসনালীর প্রদাহ বর্তমান থাকে। এই পীড়ায় প্রথমাবস্থায় সর্দি-জ্বরের লক্ষণাদি প্রকাশ পাইয়া ক্রমে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ও শ্লেষ্মার ঘড়ঘড় বা সাঁই সাঁই শব্দ, নাড়ী ক্ষীণ ও দ্রুত আঠারো ন্যায় চটচটে শীতল ঘর্ম নিঃসরণ প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। ইহার জ্বর সকালের দিকে কম থাকিয়া পরে ১০২/৫০ ডিগ্রী পর্যন্ত উঠিয়া থাকে। সাধারণতঃ ৫ হইতে ৭ দিনের মধ্যে এই জ্বর বিচ্ছেদ হইয়া যায়। কিন্তু জ্বর বিচ্ছেদ না হইয়া প্রদাহ ফুসফুস পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়া পড়িলে পীড়া কঠিন আকার ধারণ করে। ইহাকে ক্যাপিল্যারি ব্রস্কাইটিস বা ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়া বলে। এই অবস্থায় বক্ষঃপরীক্ষায় জল বুদ্বুদের ন্যায় একপ্রকার বুড়বুড় শব্দ শুনিতে পাওয়া যায়। শিশুদের এই পীড়ায় খুব সতর্কতার সহিত চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
৬। ফুসফুস-আবরক ঝিল্লী প্রদাহ (Pleurisy of Pleuritis) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য সাতটি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয় ঃ বুকের উভয় পার্শ্বের ফুসফুসকে আবৃত করিয়া যে তন্তুময় কোমল পর্দা আছে, ইংরেজীতে তাহাকে Pleura (প্লুরা) বলে। ঠান্ডা লাগা, আঘাত প্রাপ্তি, হঠাৎ ঘর্মরোধ প্রভৃতি কারণে অথবা অন্য কোন ব্যাধির উপসর্গরূপে এই প্লুরার প্রদাহ জন্মিতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থায় প্লুরা হইতে একপ্রকার তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসৃত হওয়ায় উহা মসৃণ ও পিচ্ছিল থাকে। এই তৈলাক্ত পদার্থের নির্গমণ রুদ্ধ হইলে প্লুরা শুস্ক ও খসখসে হয় এবং শীতভাব, জ্বর, শুস্ক কাশি, কাশিবার সময় পার্শ্বদেশে দারুন বেদনা, নাড়ী তারের মত কঠিন ও দ্রুত প্রস্রাব অল্প ও রক্তবর্ণ প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। ইংরাজীতে ইহাকে প্লুরিসী বা প্লুরাইটিস বলে। এই অবস্থায় বক্ষঃস্থল পরীক্ষা করিলে ঘর্ষণবৎ খসখস শব্দ (Friction Sound) শুনা যায়। কিন্তু পীড়া পুরাতন আকার ধারণ করিলে প্লুরায় জল সঞ্চিত হয়। ইহাকে আর্দ্র প্লুরিসী বলে। ইহাতে পার্শ্ববেদনা থাকে না কিন্তু জ্বর চলিতে থাকে। এই সময় যন্ত্র দ্বারা বক্ষঃপরীক্ষা করিলে কোন শব্দ শুনিতে পাওয়া যায় না।
৭। ফুসফুস প্রদাহ (Pneumonia) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য নয়টি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয়: ফুসফুসের ভিতরে স্পঞ্জের মত বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে। এইগুলি ছিদ্রকে বায়ুকোষ (Aircell) বলে। ঠান্ডা লাগা বা আঘাত প্রাপ্তি, সহসা ঘর্মরোধ, ঋতু পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে এক বা উভয় ফুসফুস প্রদাহিত হইলে তাহাকে ফুসফুস প্রদাহ বলে। ফুসফুস প্রদাহে সাধারণতঃ তিনটি অবস্থা প্রকাশ পায়। প্রদাহের প্রথমাবস্থায় প্রবল জ্বর, শুস্ক কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত ও কষ্টকর, অতিশয় পিপাসা, নাড়ী দুর্বল ও দ্রুতগতি, মূত্র অল্প ও রক্তবর্ণ বক্ষঃস্থলের সম্মুখে পার্শ্বে বা পশ্চাদ্ভাগে বেদনা প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই অবস্থায় ষ্টেথিস্কোপ দ্বারা বক্ষঃ পরীক্ষা করিলে প্রথমে কঠিন শব্দ শুনিতে পাওয়া যায় এবং পীড়া বৃদ্ধি পাইলে চুলে চুলে ঘর্ষণবৎ খসখসে শব্দ অনুভুত হয়। ফুসফুসে প্রদাহের এই অবস্থাকে ঈৎবঢ়রঃধঃরড়হ ঝঃধমব বলে। এই অবস্থার স্থিতিকাল কয়েক ঘন্টা হইতে কয়েক দিন পর্যন্ত হইতে পারে। অতঃপর ফুসফুস প্রদাহের দ্বিতীয় অবস্থা উপস্থিত হইলে ফুসফুসের বায়ু কোষগুলি একপ্রকার ঘন চটচটে রসে পূর্ণ হইয়া ফুসফুস শক্ত ও নিরেট হয় এবং উহাতে তখন আর কোন শব্দ শুনা যায় না। ফুসফুস প্রদাহের এই অবস্থাকে (Exudation Stage) বলে। এই অবস্থায় কাশির সহিত লোহার মরিচার ন্যায় অথবা ইটের গুড়ার ন্যায় লাল রঙ্গের কিংবা হরিদ্রাবর্ণের কঠিন আঠাবৎ শ্লেষ্মা উঠিতে থাকে। অতঃপর পীড়া আরোগ্যোম্মুখ হইলে জ্বর ও বুকের ব্যথা কমে এবং কাশি ও শ্লেষ্মা উঠা নিবারিত হয়। এই অবস্থায় ষ্টেথিস্কোপ দ্বারা বক্ষঃপরীক্ষা করিলে তরল শ্লেষ্মার শব্দ দ্রুত হয়। ফুসফুস প্রদাহের এই অবস্থাকে জবংড়ষঁঃরড়হ ঝঃধমব বলে। কিন্তু পীড়া কঠিন আকার ধারণ করিলে দ্বিতীয় অবস্থার পরেই ফুসফুসে পূঁজ উৎপন্ন হয় এবং কাশির সহিত প্রচুর পুঁজ উঠিতে থাকে, নাড়ী ক্ষীণ ও দ্রুত হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসের বেগ বৃদ্ধি পায় এবং রোগীর সর্বাঙ্গ বরফের মত শীতল হইয়া সঙ্কটাপন্ন অবস্থা (Critical Stage) উপস্থিত হয়। এই অবস্থায় রোগীর বক্ষঃ পরীক্ষা করিলে কেবল মাত্র চপ্ চপ্ শব্দ শুনিতে পাওয়া যায়। ইহাতে অনেক সময় রোগী দুর্বলতা বশতঃ গয়ার তুলিতে ফেলিতে না পাড়িলে শ্বাসরোধ হইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
৮। কাশি (Cough) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য চৌদ্দটি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয় ঃ কাশি নিজে একটা ব্যাধি নহে, ইহা প্রায়ই অন্য রোগের উপসর্গরূপে প্রকাশ পায়। সর্দি, পাকাশয় সংক্রান্ত রোগ, হৃদপিন্ড ও ফুসফুসের ব্যাধি, হাম, বসন্ত প্রভৃতি পীড়ার সহিত প্রায়ই কাশি বর্তমান থাকে। স্বরযন্ত্র প্রদাহ, আলজিহ্বার বিবৃদ্ধি, স্ত্রীলোদিগের জরায়ু দোষ প্রভৃতি কারণেও কাশি উৎপন্ন হয়। সুতরাং কাশির প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করিয়া লক্ষণমত ওষুধ প্রয়োগ করিতে পারিলে আশু উপকার দর্শে।
৯। শ্বাসকাশ বা হাঁপানি (Asthma) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য এগারটি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয়: অতিশয় শ্বাসকষ্ট, গলায় সাঁই সাঁই শব্দ, বুকে চাপবোধ প্রভৃতি লক্ষণ বিশিষ্ট কাশিকে শ্বাসকাশ বা হাঁপানি বলে। এই কাশির আবেশ প্রায়ই শেষরাত্রে বা ভোরে উপস্থিত হয় এবং বহুক্ষণ ধরিয়া কাশিবার পর কিছু শ্লেষ্মা বাহির হইলে শ্বাসকষ্ট অনেকটা কমিয়া যায়। অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় উপসর্গাদির বৃদ্ধি শ্বাসকাশের আর একটি বিশেষ লক্ষণ। হাঁপানি রোগের সঙ্গে প্রায় জ্বর থাকে না, কিন্তু হাঁপানি রোগী প্রায়ই অজীর্ণতা বা বাতব্যাধিতে ভুগিয়া থাকে। এই পীড়ায় মৃত্যুর আশঙ্কা অল্প।
১০। রক্তকাশ (Haemoptysis) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য নয়টি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয়: কাশির সহিত ফুসফুস হইতে উজ্জ্বল লালবর্ণের রক্ত উঠিলে তাহাকে রক্তকাশ বলা হয়। ইহা সাধারণতঃ যক্ষ্মারোগের প্রারম্ভসূচক হইলেও অনেক সময় সর্দি বা শ্বাসনলীর মধ্যে প্রদাহ ও রক্তাধিক্যহেতু এইরূপ রক্তপাত হইয়া থাকে। অর্শের স্রাব বা স্ত্রীলোকের রজঃস্রাব বন্ধ হইয়াও কাশির সহিত রক্ত উঠিতে পারে। সুতারাং মুখ দিয়া রক্ত উঠিলেই যক্ষ্মা হইয়াছে বলিয়া মনে করা যুক্তিসঙ্গত নহে।
১১। যক্ষ্মাকাশ বা ক্ষয়রোগ (Pthisis or Consumption) : লক্ষণ ভেদে এই রোগটির জন্য বারটি ওষুধ লিখেছেন।
রোগ পরিচয়: এই পীড়ায় প্রারম্ভে শুস্ক ও খুসখুসি কাশি, ঘুসঘুসে জ্বর, নৈশঘর্ম, পরিপাক ক্রিয়ার গোলযোগ, স্কন্ধাস্থির ভিতরে অথবা আক্রান্ত পার্শ্বের গলার হাড়ের নীচে ব্যথা, ফুসফুসে কুড়কুড় শব্দ, সর্বাঙ্গীণ শীর্ণতা, ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। অতঃপর ফুসফুসের মধ্যে গর্তের সৃষ্টি হইলে প্রচুর পরিমাণে পূঁজযুক্ত বা রক্তাক্ত গয়ার উঠিতে থাকে। কখনও কখনও পীড়ার প্রথম হইতেই রক্তমিশ্রিত গয়ার নিঃসরণ হইতে দেখা যায়। এই রোগ অতিদ্রুত বৃদ্ধি পাইলে তিন মাসের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটিতে পারে। অস্বাস্থ্যকর স্থানে বাস, দূষিত বায়ু সেবন, পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, অতিরিক্ত পরিশ্রম, কুলদোষ প্রভৃতি কারণে যক্ষ্মারোগ জন্মিয়া থাকে। এই সংক্রামক রোগের জীবাণু শ্বাস-প্রশ্বাস কিংবা খাদ্য দ্রব্যের সঙ্গে দেহমধ্যে প্রবিষ্ট হইয়াও রোগ উৎপন্ন করিতে পারে।