লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে। করোনাভাইরাস সংকটে অর্থনৈতিক পরিণতি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মহামারির কারণে স্বাস্থ্যগত ও লকডাউনের কারণে যে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে, তা মারাত্মক। এর ফলে দেশের অনেক মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, করোনার আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। এ থেকে জাতীয় পরিসরে নতুন দরিদ্রের এ হিসাব (১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ) প্রাক্কলন করা হয়েছে। এটা সত্য, আঘাত সব জায়গায় একইভাবে অনুভূত হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামে তার প্রভাব কমই দেখা গেছে। সে কারণে শহরের বস্তিবাসীর জীবন গ্রামের শ্রমজীবীদের তুলনায় অনেক বেশি অরক্ষিত। কেবল কৃষক ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারী বাকি সব পেশার মানুষের আয় ২০২০ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসের তুলনায় কমেছে। কিন্তু পুনরুদ্ধারের কথা যখন বলা হয়, তখন মূলত সামষ্টিক অর্থনীতির বড় বড় খাত, যেমন- তৈরি পোশাক খাতের কথাই উলেস্নখ করা হয়। জাতীয় পরিসরে কৃষির কথা সেভাবে উচ্চারিত হয় না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কম, এই করোনা পরিস্থিতিতে নারীরা শ্রমবাজার থেকে আরও দূরে ছিটকে পড়তে পারেন। পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণ করায় দরিদ্রদের দুরবস্থা আরও বাড়ছে। করোনার আগে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে যে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছিল, এর বেশির ভাগই সম্ভব হয়েছিল শ্রম আয় বৃদ্ধির কারণে। ২০১০-২০১৬ সময়ে ৮০ লাখ বাংলাদেশি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছিল। জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমাচ্ছিল। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে করোনার ভয়াল থাবায় গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে- যা আমাদের জন্য নেতিবাচক বার্তা। আমরা মনে করি, দারিদ্র্য হার কমিয়ে আনতে সব দরিদ্র পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের এই ধরনের নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ অত্যন্ত ইতিবাচক। পরিবার সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে দারিদ্র্য দূর হোক এটাই আমরা চাই। তবে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে না পারলে দারিদ্র্য পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। এ কারণে আমাদের যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা সে অবস্থায় এখনো যেতে পারিনি। এসব বাধা দূর করতে পারলে দারিদ্র্য আশানুরূপ হ্রাস করা সম্ভব। সম্ভব উন্নয়নশীল দেশের কাতার থেকে উন্নত দেশের কাতারে পোঁছাও। আমরা প্রত্যাশা করছি, করোনা মহামারির এই সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও একটি গর্বিত দেশ।