পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় ডায়রিয়া পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শনিবার দুপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মমতাজ বেগম (৪৫) এবং ৯ মাসের শিশুপুত্র জাহিদ হাসান মারা যান। মমতাজ বেগম দক্ষিণ ভাণ্ডারিয়া মহল্লার মো. ফজলুল হকের স্ত্রী এবং শিশু জাহিদ হাসান পার্শ্ববর্তী কাঠালিয়া উপজেলার দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের দুলাল হোসেন এর ছেলে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা,ডায়রিয়া রোগীর চাপে তিল ধারণের ঠাই নাই প্রতিটি ওয়ার্ড, মেঝে, বারান্দায় কোথাও জায়গা ফাঁকা নেই। প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী। গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছে ৪৫ জন রোগী। গত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ২১৭ জন রোগী। তবে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু,মহিলা এবং বৃদ্ধর সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসকগণ চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রোগীর স্বজনরা।
ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-শিশু-পুরুষ মিলে গত এক সপ্তাহে ২১৭ জন রোগীকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং একমাসে মোট ৭২৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড না থাকায় মেঝে, করিডর এমনকি বারান্দাসহ যে যেখানে পারছেন চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় রোগ নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে না। চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগী জানান, হাসপাতালে রোগীর চাপ এবং বেড না পেয়ে অতি কষ্টে বাধ্য হয়ে মেঝেতে তাদের থাকতে হচ্ছে।
এতে করে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে টয়লেট সংখ্যা সিমীত, যা আছে তাও ব্যবহারের অনুপযোগী। টয়লেটে যাওয়ার জন্য রোগীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। যা ডায়রিয়া রোগীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। রোগী সালমা বেগম জানান, সকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কোন জায়গা না পেয়ে ফ্লোরে আছি। হাসপাতাল থেকে অসুধ ও কলেরা স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।
আবাশিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রেজাউল ইসলাম জানান, প্রতিদিন গড়ে ৪০ জনেরও বেশি নতুন ডায়রিয়ার রোগী দিনে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালে নতুন ও পুরাতন মিলে সব সময় শতাধিক ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি থাকছে। অন্য রোগী এদের চিকিৎসা দিতে আমরা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছি। এ ছাড়াও পাশ্ববর্তী কাঠালিয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী এসে ভর্তি হচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য পঃপঃ কর্মকর্তা ননী গোপাল রায় ডায়রিয়ায় দুই জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করে জনান, ডায়রিয়া পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারন করছে।এটা করোনা ভাইরাসের কারণেও হতে পারে। গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।ওষুধ পত্র এখন পর্যন্ত যা আছে আমরা ম্যানেজ করে চলতেছি। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে অষুধ সংকট দেখা দিবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়ার জন্য সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি।