বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ভারতে স্বাস্থ্য খাত সেবা ভেঙে পড়েছে। দেশটিতে অক্সিজেন, বেড ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘাটতি রয়েছে। কিছুসংখ্যক করোনা রোগী হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে আবার কেউ হাসপাতালে ঢোকার আগেই মারা যাচ্ছেন।
হাসপাতালে জায়গা না হওয়ায় অনেক করোনা রোগীকে নিয়ে স্বজনদের রাস্তায়, ফুটপাতে, গাড়িতে এমনকি শ্মশানে আহাজারি করতে দেখা গেছে।
এই হলো ভারতের করোনা বিপর্যয়ের বর্তমান চিত্র। খুব অল্পসংখ্যক রোগীই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন। কিন্তু সেখানে তারা কতটুকু নিরাপদ, কতটুকু সেবা পাচ্ছেন, তাদের অনুভূতি কী?
সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগীই ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। অনেকের জন্য চিকিৎসক মিলছে না, চিকিৎসক ছাড়াই সেখানে মৃত্যুবরণ করছেন।
২৫ বয়সী গোল্ডি প্যাটেল তিন দিন তার স্বামীর অক্সিজেনের জন্য এক হাসপাতাল থেকে ঘুরেছেন। এরপর তিনি একটি হাসপাতালের সন্ধান পান যেখানে তার স্বামীকে ভর্তি করা যায়। দিল্লির একটা অস্থায়ী করোনা হাসপাতালে তার স্বামীকে ভর্তি করার পর দেখেন সেখানে সেবার কোনো মান-ই নেই। তার স্বামী সেখান দেখে মুক্তির জন্য প্রার্থনা শুরু করেন।
তার স্বামী সদানন্দ প্যাটেলের চারপাশে মানুষ মরছে। তিনি চিকিত্সকের সেবা পাওয়া তো পরের কথা দেখাও পাননি। তার ৮০ শতাংশ ফুসফুস সংক্রমিত হয়েছে, তার অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক।
রোগী সংকটে গত ফেব্রুয়ারিতে সর্দার প্যাটেল কোভিড কেয়ার সেন্টার নামে ওই হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কর্তৃপক্ষের ধারণা করেছিল, করোনা ভারত থেকে বিতাড়িত হয়েছে। ভারত করোনা জয় করে ফেলেছে।
এরপর ভয়ংকরভাবে ভারতে করোনা ছড়ালে গত ২৬ এপ্রিল হাসপাতালটি চালু করা হয়। এরপর থেকেই হাসপাতালটিতে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়, যেখানে আসন মাত্র ৫০০টি।
অন্যদিকে ভারতের উত্তরপ্রদেশে মিরুট শহরে একটি হাসপাতালের স্ট্রেচারস, টেবিল ও ফ্লোরেই রোগীরা অক্সিজেন নিয়ে বিলাপ করছে। সেখানে বেড মাত্র ৫০০টি। রোগী নেওয়া হয়েছে ১০০ জন। চিকিৎসক আছেন মাত্র পাঁচজন। অনেক রোগীই ফ্লোরেই শুয়ে পড়েছেন।
কোভিড আক্রান্ত হয়ে ভারতে প্রতিদিনই ভাঙছে মৃত্যুর রেকর্ড। রোববারও দেশটিতে মারা গেছেন তিন হাজার ৪শ’র বেশি মানুষ। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় চার লাখ মানুষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি এবার দেশটির সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের ওপর। তবে টিকা গ্রহণের অত্যাধিক চাপের কারণে ভ্যাকসিন সংকটে পড়েছে দেশটি।