‘শুনছি গরীবের ঘর আইছে, হাসিনা আপা (প্রধানমন্ত্রী) অনেক মানুষরে নাকি ঘর দিতাছে। এমন কথা শুনার পর থেকে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, নেতাদের পেছনে ঘুরেও ঘর পায়নি। আবার অনেকেই ঘুষ চাইছে। আমি কামলা দিয়ে যা পাই তা খাই। নিজের পেটই চলে না, আমি ঘুষ দিমু ক্যামনে। ঘর ছাড়াই থাকমু কিন্তু সরকারি ঘর, ঘুষ দিয়ে নিমু না। আমার ঘর করার সামর্থ্য নেই। আমি একটা ঘর ভিক্ষা চাই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই। অনেক আক্ষেপে এ কথাগুলো বলছিলেন ষাটোর্ধ দিনমজুর মো. হেলাল মিয়া। তার বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের ভারুয়া গ্রামে। এ অবস্থায় অনেক কষ্ট করে ছনের ঘরে জীবন যাপন করছেন হেলাল ও তার পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৯ শতাংশের বসতভিটায় দুইটা ছনের ঘর। একটি ঘরে স্ত্রীসহ থাকেন হেলাল। অপর ঘরটির একপাশে ছাগল, অন্যপাশে মেয়ের বিছানা। তার বাড়িতে সরকারের দেওয়া একটি সোলার (সৌর বিদ্যুত) আছে। কিন্তু ঘরের চাল মজবুত না হওয়ায়, বাঁশের খুঁটি দিয়ে লাগানো হয়েছে সোলার প্যানেল।
হেলাল জানান, ৩০ বছর আগে ৯ শতক জমি কিনেছেন। কিন্তু তার উর্পাজিত আয় দিয়ে বাড়ি করা সম্ভব হয়নি। কোন রকমে ছন দিয়ে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করেন তিনি। টাকার জন্য বসত ভিটায় মাটি কেটে উঁচুও করতে পারে না। তাই বর্ষা মৌসুমে বাড়িতে পানি উঠে। তার একটি ঘর দরকার, ঘরটি পেলে তার দুঃখ ঘুচতো, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই হতো। ঘর পেলে সন্তানদের জন্য রেখে, মরেও শান্তি পাবেন বলে জানান তিনি।
হেলালের স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, তাদের দুইটা ছনের ঘর। একটা ঘরে তারা স্বামী-স্ত্রী থাকে। অপর ঘরটাতে একপাশে গরু-ছাগল, অন্যপাশে মেয়েটা থাকে। তাদের ছেলেটা মাদ্রাসায় পড়ে। মাদ্রাসা থেকে ছুটিতে আসলে, মেয়েটি তাদের সঙ্গেই রাত যাপন করে। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির দিনে ঘরে থাকতে পারে না। ঘরে যাতে বৃষ্টির পানি না ঢুকে তার জন্য কয়েকদিন আগে ঘরের চালে কাগজ লাগাইছে তারা। তার স্বামী দিনমজুর কাজ করে অনেক কষ্টে সংসার চালায়। তিনি নিজেও অন্যের বাড়িতে কাজ করে। এ অবস্থায় তাদের বাড়ি নির্মাণ অসম্ভব। তার স্বামীর মতো তিনিও সরকারের কাছে একটি ঘর ভিক্ষা চাইছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, সরকার এমন অসহায় লোকই খুঁজছে। তার বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। এমন অবস্থার কথা জানতে পারলে, অনেক আগেই খোঁজ নিয়ে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জমি আছে, ঘর নাই এ প্রকল্প আসলে তাকে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সরকারের অন্যান্য সহায়তা তার জন্য ব্যবস্থা করা হবে।