জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ৮ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি পোস্ট ই-সেন্টার। যা আছে সবই কাগজে কলমে। আসবাবপত্র রাখা আছে স্তুপকরে, ধুলাবালী আর চাঁদরে ঢাকা। যন্ত্রপাতি সব অচল। এলাকাবাসী জানেনা পোস্ট ই-সেন্টারের কথা। পোস্ট মাষ্টারের দাবি উদ্যেক্তা নিয়োগ দেওয়া আছে, ছাত্রছাত্রী ভর্তি আছে, সকল কার্যক্রম ও যন্ত্রপাতি সচল আছে।
দেশের ডাকঘরগুলোর আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও ইমেজ বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ বা প্রকল্প গ্রহণ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। ডাকঘরগুলোকে জনপ্রিয় করতে চালু হয়েছে পোস্ট ই-সেন্টার। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পোস্ট ই-সেন্টারে তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার তথ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সাল থেকে পোস্ট অফিস গুলোকে ডিজিটালাইস্ট কার্যক্রম শুরু করে ডাকবিভাগ। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলায় আজও আলোর মুখ দেখতে পায়নি ক্ষেতলালের পোস্টে ই- সেন্টার।
ক্ষেতলাল পোস্ট মাস্টার সিদ্দিক হোসেন এর দেওয়া তথ্য মতে, পোস্ট ই-সেন্টার চালু করার জন্য ডাকবিভাগ থেকে তিন দফায় আমাদেরকে ২টি ডেক্সটপ কম্পিউটার, ২টি মাউচ, ২টি কী-বোর্ড, ১টি লেজার প্রিন্টার, ১টি ফটো প্রিন্টার, ১টি ওয়েভ ক্যাম, ১টি হেডফোন, ১টি কম্পিউটার টেবিল, ১টি মুভিং চেয়ার, ২টি কাস্টমার চেয়ার, ১টি সিমসহ মডেম, কোরাই ৫ দোয়েল ব্যান্ডের ৩টি ল্যাপটপ, ৩টি ল্যাপটপ ক্যারি ব্যাগ, ৩টি মাউচ, ৩টি কী-বোর্ড, ১টি সিমসহ মডেম, ৩টি এমকে ছকেট বোর্ড, ৩টি মাল্টিপ্লাগ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার পোস্ট ই-সেন্টারে দেখা গেছে, অস্তিত্বহীন সেন্টারে সরকারের দেওয়া লাখ লাখ টাকার ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানারসহ মূল্যবান সামগ্রী বছরের পর বছর ফেলে রাখায় অকেজো হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ দিন পড়ে থাকতে থাকতে অনেকগুলো ল্যাপটপ ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবী পোস্ট মাস্টারের। কার্যক্রম না থাকলেও প্রতিমাসে সরকারের খাতে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা জমা করছেন পোস্ট মাস্টার।
পোস্ট অফিসের ভিতরে ও বারান্দায় এলোমেলো করে ফেলে রেখেছে আসবাবপত্র টেবিল ও চেয়ার। কম্পিউটার টেবিলের উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা আছে প্রিন্টার, স্ক্যানার, কম্পিউটারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ। ডেল কোম্পানীর ১টি এলইডি মনিটর, সিপিইউ ও কিছু বৈদ্যতিক যন্ত্রাংশ পোস্ট অফিসের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করছেন পোস্ট মাস্টার সিদ্দিক হোসেন ও অন্যান্য কর্মচারী। প্রশিক্ষনার্থী ও কাস্টমার ভিডিও কলে কথা বলার জন্য ওয়েব ক্যামেরা ই-সেন্টারে থাকলেও সেটি উদ্যোক্তা তানজিলা খাতুন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য বাসায় নিয়ে গেছেন বলে নিশ্চিত করেন পোস্ট মাস্টার। ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির রেজিস্ট্রার খাতায় ৮বছরে ১৫ থেকে ১৭ জন ছাত্র ছাত্রীর ভর্তি তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চুড়ান্ত সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে দু'জনকে বাকী গুলির কোন অস্তিস্ব মেলেনি।
ক্ষেতলাল রসাল পাড়ার তৌফিক, ভাসিলা গ্রামের সোহরাব, গোপিনাথপুর এর রাকেশসহ অন্যান্যের সঙ্গে কথা বলে জানায়, আমরা পোস্ট অফিসে কম্পিউটার ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভর্তির দিন শুধু তানজিলা মেডামকে দেখেছিলাম তার পর ওই খানে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
ক্ষেতলাল পোস্ট ই-সেন্টারের উদ্যোক্তা তানজিলা খাতুনকে পোস্ট অফিসে গিয়ে না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ক্ষেতলাল পোস্ট মাস্টার সিদ্দিকুর রহমান জানায়, ডিজিটাল পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্পের অধীনে ২০১৩ সাল থেকে ডাকঘরকে পোস্ট ই-সেন্টারে রূপান্তর করার কাজ করছে ডাকবিভাগ। একজন উদ্যোক্তার মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এখান থেকে অর্জিত আয় হতে শতকরা ২০ টাকা জমা দিতে হয় সরকারি তহবিল, আর আশি টাকা পেয়ে থাকেন উদ্যোক্তা। বর্তমান উদ্যোক্তা মাতৃত্ব জনিত কারণে নিয়মিত এখানে আসতে পারেনা।
জেলা পরিদর্শক নিশীকান্ত যুগান্তর প্রতিনিধিকে বলেন, বগুড়া থেকে তিনটি জেলার পোস্ট ই-সেন্টারের কার্যক্রম দেখাশোনা করা হয়। আমাদের পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাসমূহ পরিশোধ, জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম, জমির পরচা, আর্থিক সেবা, এজিন্সি ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বীমা সংক্রান্ত কার্যক্রম, ইউটিলিটি বিল পরিশোধের সেবা দেয়া সম্ভব হবে। ক্ষেতলালে ভালো উদ্যোক্তা না থাকার কারণে এর কার্যক্রম কিছুটা ব্যহত হচ্ছে। সে যুগান্তরকে প্রতিশ্রুতি দেয় লকডাউন শেষে ভালো উদ্্েযক্তা নিয়োগ দিয়ে এ সেন্টার টিকে সচল করা হবে।