শস্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিলের পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে একসময় তিল চাষ করা হতো। তিলের তেলের চাহিদারও কমতি ছিল না। এখন নানা কারণে দিন, দিন তিল চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন এখানকার কৃষকরা। ফলে আশংকাজনকভাবে কমতে শুরু করেছে তিল চাষ।
তিল চাষের পরিবর্তে কৃষক এখন অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছেন। তাছাড়া এবছর সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জমিতে তিল বীজ বুনলেও চারা গজায়নি। ফলে মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখীণ হয়েছেন কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতবছর এ উপজেলায় ১শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে তিল চাষ করা হয়েছিল। আর চলতি মৌসুমে কমে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮৫ হেক্টরে।
জানা গেছে, বর্তমানে মণ প্রতি তিলের বাজার দর ২৪শ’ থেকে ২৮শ’ টাকা পর্যন্ত। আর প্রতি বিঘা তিল উৎপাদনে সব মিলিয়ে কৃষকের খরচ হয় প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এক বিঘা জমিতে তিল চাষ করলে ৪/৫ মণ ফলন পাওয়া যায়।
কৃষকরা জানান, বিগত বছরগুলোতে পাটের নায্য মূল্য পাওয়ায় পাটচাষ ও বিদেশী জাতের সবুজ ঘাসের (জাম্বু/নেপিয়ার) চাষ করছেন তারা। তাছাড়া এ অঞ্চলটি দেশের প্রধান দুগ্ধ উৎপাদন এলাকা হওয়ায় এখানে সবুজ ঘাসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তারা জানান, চলনবিলাঞ্চলের এ উপজেলায় বন্যা পরবর্তী মৌসুমে জমিতে একবার খেসারি বুনার পর সবুজ ঘাসের চাষ করা হয়। ঘাস চাষে খরচ তেমন নেই বললেই চলে। একবার বুনে জমিতে বন্যার পানি আসা পর্যন্ত ৪/৫ বার কাটা যায়। এলাকার দুগ্ধ খামারীরা বন্যার সময় গবাদি পশুকে ধানের খড় এবং অন্যসময় সবুজ ঘাস খাইয়ে থাকেন। এক বিঘা সবুজ ঘাস ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তাই তিল চাষ ছেড়ে দিয়ে তারা সবুজঘাস আবাদে ঝুঁকছেন। তাছাড়া বাজারে এখন আর আগের মতো তিলের তেলের চাহিদাও নেই। তিলের তেলের পরিবর্তে মানুষ সরিষা ও সয়াবিন তেল ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
কৃষক হযরত আলী বলেন,গত বছর তিনি দেড় বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছিলেন। এবছর এক বিঘা জমিতে তিলের চাষ করেছেন। আর বেশি লাভজনক হওয়ায় এবছর তিনি তিন বিঘা জমিতে সবুজ ঘাসের আবাদ করেছেন।
কৃষক আফছার আলী জানান, এবছর তিনি এক বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছিলেন কিন্তু সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জমিতে চারা গজায়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: এনামুল হক বলেন, কৃষক সবুজঘাসের আবাদ ঝুঁকে পড়ায় এবং চলতি মৌসুমে সময়মতো প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় তিল চাষ কম হয়েছে।