ও বউ ধান ভানে রে/ঢেঁকিতে পাড় দিয়া/ ঢেঁকি নাচে বউ নাচে/ হেলিয়া দুলিয়া /ও বউ ধান ভানে রে......। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি নিয়ে লেখা এ গানটিতে ঢেঁকির সাথে গ্রামীণ নারীর মধুর সম্পর্কের একটা চিত্র ফুটে উঠেছে। ঢেঁকি ধান ভানার একটি যন্ত্র। এছাড়াও গম, চিড়া, হলুদ, মরিচ প্রভৃতি শস্য কোটার যন্ত্র হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোয়ায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন বিলুপ্তির পথে।
জানা গেছে, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষ ধান ভানার জন্য একসময় ঢেঁকির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। আগের দিনে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঢেঁকি ছিল। ঢেঁকি ঘরে থাকতো ঢেঁকি। গ্রামের বধূরা ভোর রাত থেকেই শুরু করতো ধান ভানার কাজ। ঢেঁকির ঢাঁকুর-ঢেঁকুর শব্দে বাড়ির অন্য সবার ঘুম ভাঙতো। ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভানতো আর মনের সুখে গান গাইতো তারা। ঢেঁকিতে কে কতটা পাড় দিতে পারে, তাদের মধ্যে চলতো সে প্রতিযোগিতা। গ্রামীণ বধূদের আলতা রাঙা পায়ের স্পর্শে ঢেঁকিও যেন নেচে-গেয়ে উঠত !
প্রতিবছর নবান্ন উৎসবে গ্রামগুলোতে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে চাল গুড়ো করার উৎসব পড়ে যেত। ঢেঁকিতে ভানা আটা দিয়ে ভাপা, পাটিসাপটাসহ নানা ধরনের পিঠা-পুলি তৈরি করা হতো। এখনও উপজেলার প্রায় গ্রামে ঢেঁকির দেখা মিললেও এসব ঢেঁকির ব্যবহার কমে গেছে। আধুনিক যুগে মানুষ এখন কষ্ট শিকার করে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান,গম ভানাতে নারাজ। ঢেঁকির বদলে রাইচ মিল থেকে ভান ভানিয়ে নিয়ে আসেন তারা। তবে এখনও কিছু মানুষ আছে যারা ঢেঁকিতে আটা ভানিয়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুস্থির কুমার সরকার বলেন, ঢেঁকিতে ছাঁটাই করা চালের ভাত খেতে খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হলেও ঢেঁকির ব্যবহার কমে যাওয়ায় মানুষ এখন আর ঢেঁকিতে ধান ভানে না। শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, এখনও তাদের বাড়িতে একটি ঢেঁকি আছে। নিজেরাসহ পাড়া প্রতিবেশিরা পিঠা তৈরির জন্য সিদ্ধচাল এ ঢেঁকিতে ভানিয়ে নিয়ে যান। গৃহবধূ সাদিয়া আরফিন বলেন, এখন আর কেউই ঢেঁকি দিয়ে খাবার চাল ভানে না। শুধু পিঠা তৈরির জন্য সিদ্ধচাল ভানানো হয় ঢেঁকিতে।