রাজবাড়ীতে শহর রক্ষাবাঁধ সুরক্ষার জন্য ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্লক দিয়ে পদ্মানদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই ধসে গিয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে কাজ শেষ সম্পন্ন করার সময়সীমা। ঝুঁকিতে রয়েছে শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটি পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। ’৮০ দশকে প্রমত্ত পদ্মা নদীর হাত থেকে শহর রক্ষার জন্য বাঁধ শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার জামতলা এলাকা থেকে পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সেনগ্রাম পর্যন্ত রাজবাড়ী অংশে বাঁধের দৈর্ঘ্য ৬৫ কিলোমিটার। ২০০৯ সালে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষা (ফেজ-১) প্রকল্পের আওতায় পদ্মার তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাজবাড়ী সদর উপজেলায় গোদারবাজার থেকে বোতলা স্লুইচগেট পর্যন্ত ২.২৪ (দুই দশমিক ২৪) কিলোমিটার তীর সংরক্ষণের জন্য ব্যয় হয় ৪৭ কোটি টাকা ৭১ লাখ টাকা। কাজ সম্পন্ন করার পাঁচবছরের মধ্যে ভাঙনে ব্লক ধসে যায়। পাঁচটি প্যাকেজে দেড় কিলোমিটার পদ্মাতীর মেরামতের ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দুই বছর মেয়াদী কাজ চলতি বছর মে মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো। ঠিকাদারী কাজ করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
সরেজমিনে শনিবার দেখা যায়, শহরের গোদার বাজার বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ছুটির দিনসহ বিভিন্ন উৎসব কেন্দ্র করে বিনোদনপ্রেমীরা নদীর পাড়ে ছুটে যায়। গোদার বাজারের পূর্বদিকে একটি ইটভাটা। ইটভাটার পূর্বদিকে শেষ প্রান্ডে নদীটি কিছুটা বাক নিয়েছে। বাকের আগে ব্লক ধসে গিয়েছে। ব্লকের নিচ দিয়ে পানি যাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মাতীর সংরক্ষনের উদ্যোগ নিয়েছে। দুইবছর আগে কাজ শুরু হয়েছে। সারাবছর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢিমেতালে কাজ পরিচালনা করে। আর বর্ষা এলে কাজের তোরজোড় শুরু হয়। এবার তেমন বৃষ্টিপাত নেই। একদিনের সামান্য বৃষ্টিতেই ব্লক ধসে গিয়েছে। তাহলে বর্ষা মৌসুমে কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিছু মানুষ আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। আর পদ্মার অবস্থা একই রকম রয়ে যাচ্ছে।
এক নম্বর প্যাকেজের আয়তন ৬০০ মিটার। এই প্যাকেজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার বিজে। প্রতিষ্ঠানটি মালিক কুমিল্লা-৮ আসনের সাংসদ নাছিমুল আলম চৌধুরী ওরফে নজরুল। এই অংশের প্রায় ২০মিটার অংশে ধসে গিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাঁরা ইতোমধ্যে মোট কাজের ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন করেছেন।
কাজের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পাউবো’র উপসহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, প্রায় ২০মিটার অংশে ব্লক ধসে গিয়েছে। ওই অংশ দিয়ে ইটভাটার পানি একটি পাইপের সাহায্যে নদীতে যেতো। বৃষ্টি হওয়ার কারণে ইটভাটায় পানি জমে ছিল। পরে তা পাইপের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ফলে এই অবস্থার তৈরি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠনটির মহাব্যবস্থাপক রকিব আহমেদ ভূইয়া বলেন, কাজের ডিজাইন করা হয়েছে ২০১৪ সালে। কার্যাদেশ দিয়েছে ২০১৯ সালে। এতে করে অনেক স্থানে ভৌগলিকভাবে পরিবর্তিত হয়। তবে ধসে যাওয়ার বিষয়ে আমি কোনো কিছু জানি না। আমরা মেরামত করে দিবো। আমাদের দায় কাজ হস্তান্তর হওয়ার পরে এক বছর। এর আগে বা পরে কোনো সমস্যা হলে তার দায়ভার আমাদের নয়। কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমরা ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় চেয়েছি।
রাজবাড়ী পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ বলেন, কাজ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। ধসে যাওয়ার বিষয়টি আমরা অবগত। কাজ করার সময় স্থানীয়দের কিছু ডিস্টার্ব থাকে। এটি একটি মাইনর ব্যাপার। কাজ করার সময় নিচের পাইপ দেখতে পায় নাই। এটির বর্ষার পানির সম্পর্ক নেই। বর্ষায় বস্তা ফেলাসহ আরও কিছু কাজ করা হবে। একারণে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।