লালমনিরহাটে মাত্র দুই হাত জমির জন্য ১০ মাসের অন্তসত্ত্বা নিজের ভাগিনী আদুরীর পেটে লাথী মেরে পেটের সন্তান হত্যা করল তারই নিজ মামা জামাল ও হোসেন আলী নামের দুই নরপশু। মামলা দায়েরের ১৪ দিন পেড়িয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে আসামি গ্রেফতার করছে না লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের ঠিকানার বাজারে এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে। আদুরী খাতুন ঠিকানা বাজারের বাবুল মিয়ার বিবাহিত মেয়ে এবং সে ১০ মাসের অন্তস্বত্বা ছিল। এই ঘটনায় আদুরীর ভাই ফরিদুল ইসলাম বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় ৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৩২, তারিখ ২১/০৫/২১ ইং। মামলার বিবরণে জানাগেছে, রাজপুর ইউনিয়নের ১নং চাংরা আবাসন এলাকার ঠিকানার বাজারে আপন বোনের সাথে মাত্র দুই হাত জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল তারই আপন ভাই জামাল ও হোসেন আলীর সাথে। এরই জের ধরে গত ১৮ মে নিজ বাড়ীর সামনে খরের একটি পুঞ্জ (ঢিপি) দিতে গেলে জামাল ও হোসেন আলী তাতে বাধা দেয়। পরে আদুরীর বাবা বাবুল মিয়া এর প্রতিবাদ করলে তাকে ও তার দুই ছেলেকে বেধরক মারপিট করে। এ সময় অন্তস্বত্বা আদুরী বাবা ও ভাইকে বাচাতে গেলে এ তার আপন মামা তার পেটে লাথি মারলে সাথে সাথে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং মারাত্বক অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ পরও ক্ষান্ত হয়নি পাষান মামারা অন্তস্বত্বা অসুস্থ আদুরীকে তারা যেন হাসপাতালে নিতে না পারে এজন্য বাড়ীর চারপাশে দেয়া হয় বাশের বেড়া। এলাকাবাসী যাতে তাদের সহযোগিতা করতে না পারে সেজন্য দেয়া হয় অস্ত্রের মহড়া।
পরের দিন রাতে আদুরীর অবস্থা আরো বেগতিক হলে ঘরের বেড়া কেটে বাড়ীর পিছন দিয়ে হাসপাতালে নেয়া হয় এবং সেখানেই আদুরী একটি মৃত সন্তান প্রসব করে।
আদুরী জানায়, আমি ও আমার স্বামী ভোটমারী স্বামীর বাড়ী হতে বাবার বাড়িতে ঈদের দাওয়াত খেতে এসে আমার এ অবস্থা হলো। আমার ভাই ও বাবাকে মামারা যখন মারছিল তখন আমার মা ও আমি বাবাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে যাই। আমরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আমার পরিবারের সবাইকেসহ তারা আমাকেও বেধরক মারপিট করে। এ সময় জামাল মামা আমার পেটে লাথি মারে। আমি যে অসুস্থ তারা লক্ষ করল না। মাত্র দুই হাত জায়গার জন্য। সেটিও আমাদের জায়গা। আমাদের জায়গার উপরই খরের ঢিপি দিতে এ ঘটনা ঘটায় আমার মামারা।
আদুরী আরো জানায়, আমার পেটের সন্তানকে হত্যা করায় আমার স্বামীর বাড়ীর লোকজনও আমাকে আর নিতে চাচ্ছে না। এটি আমার আমার প্রথম সন্তান ছিল। আমি এখন কি করব? আমি আমার সন্তানের হত্যাকারীদের বিচার চাই প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কাছে।
এলাকাবাসী জানায়, জামাল ও হোসেন এলাকায় প্রভাবশালী হওয়া বর্তমানে নির্যাতিত ওই পরিবারটি নিরাপত্তাহীতায় ভুগছে। অথচ মামলা দায়েরের বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পড়েও আসামি ধরছে না থানা পুলিশ। তারাও বিষয়টি প্রশাসনের প্রতি নজর দেওয়ার আহবান জানান।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ শাহা আলম বলেন, এজাহার ভুক্ত তিনজনের মধ্যে দুইজন জামিন নিয়েছেন। অপর আসামি পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।