সারাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অসহায় মানুষকে ঈদ উপহার পাঠানো হয়েছে। গতবার যারা উপহার পেয়েছেন এবারও তারাই পেয়েছেন। তবে এবার নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে মোটরশ্রমিক।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনাকালের প্রথমধাপে বালিয়াকান্দিতে আট হাজার ৪০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়। তথ্যগত ভূল থাকায় কিছু নাম বাদ পড়ে। উপহার পান চার হাজার ৬৫৩জন। নামে সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর মেলেনি। করোনাকালের দ্বিতীয় ধাপে বালিয়াকান্দিতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঈদ উপহার পেয়েছে কতজন সেটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছেনা। তবে নতুন করে ৩৬৮ জন মোটরশ্রমিক ঈদ উপহার পেয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ঊর্ধ্বতন দপ্তর থেকে যখন তালিকা বাস্তবায়নের জন্য সময় কম থাকে। এতে করে তড়িঘড়ি করে তালিকা তৈরি করা হয়।
বালিয়াকান্দি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬৩টি ওয়ার্ডে তথ্য যাচাই-বাছাই করনের জন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও দাখিল মাদ্রাসার প্রায় ১৩০ জন শিক্ষক মাঠ পর্যায়ে কাজ করে। এ বিষয়ে অন্তত ৫০ জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, আমরা যখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করেছি। এ সময় বড় ধরনের অনিয়ম দেখতে পাই। নির্দেশনা অনুযায়ি, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস ট্রাকসহ পরিবহন শ্রমিক ও হকার। কিন্তু কিছু কিছু ইউপি সদস্য তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজনের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে। তালিকায় অনেক বিত্তবান লোক পাওয়া যায়। যারা সমাজের প্রতিষ্ঠিত লোক বলে পরিচিত। তবে ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যদের সাথে যাদের সখ্যতা বেশি তাদের নামই তালিকায় বেশি, তাদের কেউ কেউ একাধিক সরকারি সুবিধা পেয়ে থাকেন। আমরা তালিকা যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে পার্শ্ববর্তী হতদরিদ্র পেয়েছি যারা এই তালিকায় নেই কিংবা কোন ধরনের সরকারি সুবিধা পায় না। কোন কোন দরিদ্রের নাম তালিকায় থাকলেও জাতীয়পরিচয়পত্র কিংবা সিম নিবন্ধন ঝামেলায় শেষ পর্যন্ত টাকা পায়নি অনেকেই বলে জানতে পেরেছি। হয়তো এবারো তারা প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে তারা জানান। বর্তমান সরকারি দরিদ্র মানুষের জন্য যেভাবে কাজ করছেন তাতে একজনও বাদ পড়ার কথা না কিন্তু ডিজিটাল ডাটাবেজ না থাকায় এধরনের সমস্যা হচ্ছে। তারা জোর দাবী করেন সারাদেশে সমন্বিত উদ্যোগে একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরী করা। যাতে করে প্রকৃত ব্যক্তিকে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন।
কাজল বেগম নামে একজন নারী বলেন, আমার দরিদ্র পরিবারে বিয়ে হয়েছে, আমি স্বামীর বাড়ীতে থাকি। আমার মা নুরজাহান বেগম ঠিক মত কানে শোনেন না, আমার ভাই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আমার মা কোন ধরনের সরকারি সুবিধা পায় না। আমারও তেমন সক্ষমতা নেই। অপর নারী আছিয়া বেগম বলেন, অনেকেই অনেককিছু পায়, আমার কপালে কিছুই জোটে না, ইউপি সদস্যদের কাছে ধন্না ধরতে ধরতে হতাশ হয়ে পরেছি। তারা বলেন, ইউএনও স্যার যদি আমাদের জন্য একটা কিছু করে দিতো তাহলে আমরা কোনমতে দু’বেলা খেয়ে জীবনকাটাতে পারতো। সরোজিৎ নামে একজন জানান, করোনার প্রথম ধাপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঈদ উপহার ২৫০০ টাকা পেয়েছিলাম এবার পাইনি।
সোনার বাংলা সমাজকল্যান ও ক্রীড়া সংসদের আহ্বায়ক এসএম হেলাল খন্দকার বলেন, আমার পার্শ্ববতী অনেক হতদরিদ্রকেই দেখেছি কোন ধরনের সরকারি সুবিধা পায় না। আবারে কেউ কেউ একাধিক সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন এমনটাও দেখেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদে সঙ্গে যাদের সখ্যতা বেশি তারাই এসব সুবিধা পায়। সমন্বিত উদ্যোগে ডিজিটাল ডাটাবেজ করার কোন বিকল্প নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা বলেন, করোনার প্রথমধাপে বালিয়াকান্দিতে আট হাজার ৪০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়। এনআইডি কার্ডের সাথে মোবাইলের অসামঞ্জসতা থাকায় কিছু নাম বাদ পড়ে। উপহার পান চার হাজার ৬৫৩জন। দ্বিতীয়বারে কতজন কতজন উপহার পেয়েছে সে তথ্য আমাদের কাছে নেই, তবে নতুন করে ৩৬৮ জন মোটরশ্রমিক ঈদ উপহার পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে বালিয়াকান্দি উপজেলায় হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ মানুষ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। চেষ্টা করছি বাদপড়া দরিদ্র ব্যক্তিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনার, আশা করছি খুব শীঘ্রই একটি তালিকার মাধ্যমে এটির একটি স্থায়ী সমাধান হবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদ উপহার প্রধানমন্ত্রী একটি মহৎ উদ্যোগ। এধরণের উদ্যোগ আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী নেননি। কিন্তু তালিকা নিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছে, ভিন্ন মত আছে। আমাদেও এলাকা একটি দরিদ্রপ্রবণ এলাকা। পরপর দুইবার একই ব্যক্তি ঈদ উপহার পেয়েছে। উপহার প্রাপ্তদের বাইরেও অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে। দ্বিতীয়বার নতুন তালিকা করে উপহার দিলে আরও অনেক পরিবারের মুখে হাসি ফুটতো। বর্তমান সরকার ডিজিটাল সরকার। একটি স্থায়ী ডাটাবেজ থাকলে এসব কাজ সহজ হয়ে যাবে। আবার প্রকৃত অসহায় মানুষকে সহযোগিতার আওতায় আনা যাবে।