বর্তমানে পাহাড়ী ঢাল ও সমতলে ফসল নেই, হাতির নজর এখন পাকা আম কাঠালের দিকে। ফলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তের পাহাড় গুলিতে আম কাঁঠাল খাওয়ার নেশায় মত্ত হয়ে গত দুই মাস যাবৎ নালিতাবাড়ী সীমান্তের ৩টি ইউনিয়ন রামচন্দ্রকুড়া, নয়াবিল ও পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ২০টি পাহাড়ী গ্রামে প্রায় প্রতিরাতেই হামলা চালাচ্ছে। পাহাড়ী ঢাল, ঝোপঝাড়, বাড়ীর আশপাশে থাকা কলা গাছ, আম কাঠালের গাছ, কাঁচা পাকা আম কাঁঠাল খেয়ে নিচ্ছে এই বন্য হাতির দল। তবে আর্চায্য জনক ভাবে এই বন্য হাতি পাহাড়ী ইউনিয়ন পোড়াগাঁওয়ের ভিতরে যে পর্যটন এড়িয়া মধুটিলা ইকো পার্ক রয়েছে সেখানে বন্য হাতির দল কখনই প্রবেশ করে না।
এলাকাবাসী জানায়, ক্ষুধার তাড়নায় ফসল ও ফলের গাছ তো আছেই অনেক সময় রাত বিরাতে পাহাড়ী বাড়ী ঘরেও ঢুকে পড়ছে বন্য হাতির দল। এবস্থায় পাহাড়ী মানুষজন আতঙ্কিত অবস্থায় দিনানীপাত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে পোড়াগাঁওয়ের বারমারী মিশন ও পানিহাটা মিশনে গত রোববার রাতে বন্য হাতির দল আক্রমণ করেছে। মিশনের উত্তর ও পূর্ব দিক দিয়ে সীমানার খুঁটি উপড়িয়ে কাঁটাতার ধূমড়ে মুচরে পা দিয়ে পিষিয়ে পিছনের গেইট ভেঙে বাচ্চাসহ বন্য হাতির একটি দল মিশনের ভিতর প্রবেশ করে গাছপালা ভেঙে ফেলে। কাঁঠাল গাছের কাঁঠাল খেয়ে সাবাড় করে দেয়। মিশনের ভিতর কয়েক ঘন্টা অবস্থান করে হাতির দল। সেই পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে হাতি ওঠা নামা করার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে টিলাগুলিও ধসে যেতে বসেছে। এই অবস্থায় এলাকার মানুষজন হাতি তাড়াতে মশাল জালিয়ে, পটকা ফাটিয়ে, আগুন ধরিয়ে হাতি তাড়াতে দিন রাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে অতি উৎসাহী হয়ে হাতি তাড়াতে হাাতির পিছনে বনের ভিতর ছুটছে। এই বন্য হাতির আক্রমনে ২০ বছরের অধিক সময়ে ৫০ জনের মতো মানুষ হাতির পৃষ্ঠে মারা গেছে। দিন রাত হাতি আতঙ্কে রয়েছেন পাহাড়ি গ্রামবাসী।
রামচন্দ্রকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খোকা বলেন, পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর গ্রামগুলিতে বন্য হাতির আক্রমণ শেষ হচ্ছে না। দীর্ঘ দিন ধরে তারা এই পাহাড়ী গ্রামে চষে বেড়াচ্ছে ও অবস্থান করছে। ফসল খচ্ছে বাড়ীঘর নষ্ট করছে। মানুষও মারা পড়ছে।
এব্যাপারে মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের রেঞ্জার মোঃ আঃ করিম বলেন, এই বন্যহাতি গুলি আমাদের দেশের নয়। এরা ভারত হতে এসেছে। আমরা জানতে পেরেছি সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ী গ্রাম গুলিতে বন্যহাতির দল প্রায় প্রতি রাতেই আক্রমণ করছে। আমরা এলাকার মানুষজনকে নিষেধ করি যে, তাদের পিছনে অতি উৎসাহী হয়ে তাড়া করা যাবে না। তারা এমনিতেই যা কিছু করার করে চলে যাবে। কিন্তু মানুষ কে কোন ভাবেই মাননো যাচ্ছে না। তারা হাতি দেখলেই হাতিকে তাড়া করেছে। হাতিও এখন মারমুখি হয়ে যাচ্ছে। মানুষ হাতি এখন মুখোমুখি অবস্থান করছে। সরকারের তরফ থেকে বন্য হাতির আক্রমনে বাড়ী ঘর ক্ষতিগ্রস্থ ও ফসল হানি হলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার হতে ফরেষ্ট অফিসে আবেদন করবে, থানায় জিডি করবে, একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলবে। এরপর সরকার তাকে ক্ষতি অনুযায়ী বরাদ্ধ ও ৫০ হাজার হতে আরো বেশি অনুদান দিবে এবং মানুষ হাতির পৃষ্টে মারা গেলে ২লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান দিবে। সরকারতো হাতির জন্য ক্ষতি পূরন দিচ্ছে। এরপরও মানুষ হাতির দেখলেই তার পিছনে ছুটছে তাড়া করছে। ফলে হাতি বিরক্ত ও জেদী হয়ে বার বার এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে বন্য হাতি এই পর্যটন এড়িয়া মধুটিলা ইকো পার্কে আসে না।