করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক লকডাউনে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার জটের শঙ্কা বাড়ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইইউএস। ওই ক্ষমতার পুরোটাই ব্যবহার হয়ে গেলে পণ্য লোডিং, আনলোডিং ও ডেলিভারির ইক্যুইপমেন্টস চলাচলে সমস্যা হয়। ফলে বন্দরের উৎপাদনশীলতা কমার শঙ্কা তৈরি হয়। মূলত ইয়ার্ডের বেশকিছু স্থান ফাঁকা থাকলে তা স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য সহায়ক। কিন্তু লম্বা ছুটি বা দৈবদুর্বিপাকে পণ্য ডেলিভারি থেমে থাকলে বন্দরে কন্টেনার জট অনিবার্য হয়ে পড়ে। লকডাউনে যদি বিভিন্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ সরকারী-বেসরকারী সেক্টর বন্ধ থাকে তাহলে বন্দরের ওপর তার প্রভাব পড়ার শঙ্কা বাড়ে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারাদেশ বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর চালু থাকে। কারণ লকডাউনেও বন্দরে জাহাজ আসা বন্ধ থাকে না। আর জাহাজ এলে পণ্য আনলোডিং করতে হয়। তখন ঠিকমতো ডেলিভারি না হলে ইয়ার্ডে কন্টেনারের স্তুপ জমে যায়। তখন বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে চলবে সর্বাত্মক লকডাউন। এমন অবস্থায় কন্টেনার জটের শঙ্কায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারী তথা আমদানি-রফতানিকারকরা। ওই বিবেচনায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, করোনা সতর্কতার লকডাউন এবার বেশ কড়াকড়িভাবে কার্যকর করার ঘোষণা রয়েছে। সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারী অফিস ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এমন অবস্থায় আমদানি-রফতানিকারক এবং বন্দর ব্যবহারকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কারণ একবার জট হলে তা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসতে মাস পেরিয়ে যায়। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতি কতোদিন থাকবে এবং এ নিয়ে কতো সময় বিধিনিষেধ বলবৎ থাকে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, আমদানি ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্দরের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। লকডাউনে সেগুলো বন্ধ থাকলে তার প্রভাব বন্দরের ওপর পড়তে বাধ্য। কেননা জাহাজ আসতেই থাকবে। পণ্য আনলোডিং না করলে ড্যামারেজ গুনতে হবে। আর খালাস করা পণ্য যদি স্বাভাবিক নিয়মে ডেলিভারি না হয় তাহলে কন্টেনার জট সৃষ্টি হতে বাধ্য। সাধারণত পোশাক শিল্পসহ আমদানি ও রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যই বেশি এসে থাকে। ওই সকল প্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ থাকে তাহলে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিও থমকে থাকবে। তাছাড়া ভোগ্যপণ্য খালাস, ডেলিভারি ও সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকলে বাজারে ঘাটতি দেখা দেবে। তাতে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার শঙ্কাও থেকে যায়। চট্টগ্রাম বন্দর সারাবছরই সচল থাকে। শুধুমাত্র বছরে দুই ঈদে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য প্রথম শিফট বন্ধ থাকে। তারপর বিকেল থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রতিবছর ঈদে সপ্তাহখানেকের বন্ধে যে পরিমাণ পণ্য জমা হয়, তা স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে মাস গড়িয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতিতে সারাবিশে^ই এক ধরনের স্থবির অবস্থা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তারপরও দেশের অর্থনীতি ও সম্ভাব্য সঙ্কট বিবেচনায় সরকার যৌক্তিক পদক্ষেপ নেবে আমদানি, রফতানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোর এমনই আশাবাদ।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জানান, প্রতিদিন বন্দরে আমদানি-রফতানি মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়। তার মধ্যে জাহাজ থেকে নামে ৩ থেকে ৪ হাজার কন্টেনার। প্রায় সমপরিমাণ কন্টেনার বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়। এভাবেই ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু কোন কারণে এর ব্যত্যয় ঘটলেই বিপত্তি ঘটে। তখন বন্দরের স্বাভাবিক কর্মকা-ের ওপর চাপ পড়ে।