বে-টার্মিনাল নির্মাণে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিনামূল্যে ৮০২ একরেরও বেশি জমি দিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদনের পর ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেয়া এক পত্রে ভূমি হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সাল থেকে বে-টার্মিনালের জন্য জমি পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় ৬৮ একর জমি সরকারি ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী ক্রয় করে বে-টার্মিনাল উন্নয়ন কাজ শুরু করে। আর বাকি প্রায় ৮০৩ একর জমি খাস হওয়ায় তা পেতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। বিগত ২০১৯ সালে সরকারের কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির পক্ষ থেকে ওই জমি অনুমোদন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ খাসজমি প্রতীকী মূল্যে কিংবা বিনা মূল্যে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছিল। কারণ সরকারি ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী ওই জমির মূল্য পরিশোধ করতে হলে বন্দরকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বে-টার্মিনাল প্রকল্পটির ৮০৩ একর জমির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় প্রকল্প প্রলম্বিত হচ্ছিল। বে-টার্মিনাল প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে চট্টগ্রামসহ দেশের ব্যবসায়ী মহল দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি বিষয়ে সরকার থেকে অনুমোদনসহ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। বে-টার্মিনাল এলাকায় ৩টি বড় টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে করবে। বাকি দুটি টার্মিনাল পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। সে বিষয়ে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি (পিএসএ), দুবাই পোর্টসহ (ডিপি ওয়ার্ল্ড) কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেয়া চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দরকে বে-টার্মিনালের জন্য ৮০২ দশমিক ৩ একর খাসজমি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে হস্তান্তর করার জন্য বলা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই জমি হস্তান্তর সম্পন্ন হবে। চট্টগ্রাম বন্দরসংলগ্ন পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে প্রায় ২ হাজার ৫০০ একর জমি নিয়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাকি জমি সমুদ্র উপকূল ভরাট করে উদ্ধার করা হবে। বন্দর সংশ্লিষ্টদের অভিমত, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলে আগামী অর্ধশত বছর পর্যন্ত দেশে কোনো নতুন বন্দর নির্মাণের প্রয়োজন পড়বে না।
সূত্র আরো জানায়, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক চট্টগ্রাম বন্দরের বহু প্রত্যাশার বে-টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিয়ন্ত্রক) ও চ্যানেল নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি দেশও প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। ৮০৩ একর ভূমির অনুমোদন হয়ে যাওয়ায় বে-টার্মিনাল নির্মাণে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতারও সুরাহা হয়ে গেছে। ফলে আগামীর বন্দরখ্যাত বে-টার্মিনালের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) আগামী ২০২৪ সালের মধ্যেই ওই সুপরিসর টার্মিনালে জাহাজ ভেড়াতে চায় ।
এদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে ভূমি হস্তান্তরের অনুমোদন হওয়ায় এখন তা আর ৩ গুণ মূল্য দিয়ে অধিগ্রহণ করতে হবে না। বে-টার্মিনাল নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রধান দুটি কাজ হলো সাগরের ঢেউ নিয়ন্ত্রণে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ ও চ্যানেল প্রস্তুত করা। ওই দুই ক্ষেত্রেই বিশ^ব্যাংক অর্থায়ন করতে সম্মতি দিয়েছে। ফলে আর্থিক বিষয়েও আর কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া পিপিপির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতায় জেটি নির্মাণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব এবং আরো কয়েকটি দেশ। চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারিত নতুন অংশে হবে ৩টি টার্মিনাল। যার একটি বন্দর কর্তৃপক্ষ এককভাবে এবং বাকি দুটি পিপিপির ভিত্তিতে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিগত ২০১৮ সালের ১ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
অন্যদিকে বে-টার্মিনালের জমি পাওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, বে-টার্মিনালের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জমি শেষ পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ পেতে যাচ্ছে।