রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকদ্রব্যসহ নগদ প্রায় এক কোটি টাকা জব্দ করেছে পুলিশ। এ সময় মেয়র পত্নী জেসমিন বেগম, মেয়রের দুই ভাতিজা সোহান (২৫) ও শান্তকে (২৩) আটক করা হয়েছে। একটি মামলার সূত্র ধরে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে বুধবার (৭ জুলাই) ভোর ৫টা পর্যন্ত আড়ানী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পিয়াদাপাড়া মহল্লায় অবস্থিত মেয়র মুক্তারের বাড়িতে এ অভিযান পরিচালিত হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান মেয়র মুক্তার আলী। এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত করা হয় জব্দকৃত আলামতসহ আটককৃতদের।
জব্দকৃত আলামতের মধ্যে রয়েছে- একটি অবৈধ বিদেশী পিস্তল, একটি ওয়ান শ্যুটার গান, একটি দেশীয় তৈরী বন্দুক, একটি এয়ার রাইফেল, শর্ট গানের ২৬ রাউন্ড গুলি, পিস্তলের ৪টি ম্যাগজিন ও ১৭ রাউন্ড গুলি, ৪টি গুলির খোসা, ১০ গ্রাম গাঁজা, সাত পুরিয়া হেরোইন, ২০ পিস ইয়াবা, নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং মেয়রের স্বাক্ষরিত ১৮ লাখ টাকার দুটি ব্যাংক চেক।
এসপি জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পৌরসভার জয়বাংলা মোড়ে বাড়ি সংলগ্ন ওষুধের দোকানে বসেছিলেন মনোয়ার হোসেন মজনু। তিনি নাটোরের বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। গত পৌরসভা নির্বাচনে মনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহীদুজ্জামানের পক্ষে কাজ করেন। এ কারণে তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন মেয়র মুক্তার আলী। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মেয়র মদ্যপ্য অবস্থায় দলবল নিয়ে গিয়ে কলেজ শিক্ষক মনোয়ার হোসেনের দোকানের সামনে গিয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। এরপর মনোয়ার ও তার স্ত্রী এবং ছেলেকে মারধর করেন।
এ ঘটনায় রাতেই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মেয়র মুক্তার আলী ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. অঙ্কুরের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত তিন-চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারী পুলিশ সুপার রুবেল মাহমুদ ও বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসপি জানান, বাড়িতে পাওয়া কোটি টাকার উৎস জানাতে পারেনি পরিবার। টাকা কোথা থেকে এলো, তা তদন্ত করা হচ্ছে। আর আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর কোন লাইসেন্স নেই। এছাড়াও আগে থেকেই মেয়রের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা ছিলো। সেগুলো মারামারির মামলা। এসব মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন। নতুন করে শিক্ষক মনোয়ার হোসেন একটি মামলা করেছেন। এ ছাড়া অস্ত্র, টাকা ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ আরও তিনটি মামলা করবে। এ ছাড়া মেয়রকে আটকের জন্য পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে বলেও জানান এসপি।
জানা গেছে, মুক্তার আলী আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি দলীয় মনোনয়নেই মেয়র হয়েছিলেন। তারপর থেকেই ছিলেন বেপরোয়ো।