সামনে কোরবানির ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীর মোহনপুরে গরু-ছাগল ও ভেড়া পালন করে আসছেন অনেকে। সারা বছর নিজেরা কষ্টে থাকলেও ঈদে ভালো দামে বিক্রির আশায় গরু-ছাগল ও ভেড়ার যথেষ্ট লালন-পালন করেন তাঁরা। এবার লকডাউনের কারণে কোরবানি আগের বছরের তুলনায় কম হবে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। তাই দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন খামারিরা। অনেকেই ধারদেনা করে গরু-ছাগল পালন করেছেন। করোনার কারণে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে সংকটে পড়েছেন। তাঁরা এবার পশু কোরবানির কথা ভাবতেই পারছেন না। মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত যাঁরা একাধিক পশু কোরবানি দিতেন, তাঁরা অনেকেই এবার এ সংখ্যা কমাবেন। অনেকে আবার করোনাজনিত কারণে পশুর হাটে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। সব মিলিয়ে এবার পশুর চাহিদা কম থাকবে। সংগত কারণেই এবার সারা দেশে পশুহাটের সংখ্যা কমেছে। হাটের সংখ্যা কম হওয়ায় ইজারাদাররা হাটের ইজারামূল্যও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। লকডাউন পালনে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানুষ অর্থনৈতিক সংকটে দিন পার করছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই কোরবানি দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। মোহনপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ছোট-বড় মিলে গরুর খামার রয়েছে ১৮৩টি। ছাগল-ভেড়ার খামার রয়েছে ১০৬ টি। এ বছর কোরবানির ঈদে ১৭ হাজার গরু ও ৩৬ হাজার ছাগল-ভেড়া বিক্রয় প্রস্তুত নিয়েছেন খামারিরা।
গরু ব্যবসায়ী ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক জানান, গত বছর কোরবানির পশুর হাটগুলোয় প্রচুর পরিমাণ গরু অবিক্রীত ছিল। এবার আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছে, অনেকেই কোরবানি দিতে পারবেন না। কারণ অনেকে এখন চাকরিহীন, নিম্নবিত্তরাও কর্মহীন। তাই কিনা-বেচা কম হচ্ছে।
মোহনপুর উপজেলার মহব্বতপুর মায়ার মোড় গ্রামের গরুর খামার মালিক সাইদুল হক বলেন, এবছট খুবই খারাপ অবস্থা। আমার নিজের পালন করা ১৬ টি গরু রয়েছে। তিনি জানান, প্রতিটি গরু এবার ২ থেকে ৩ লাখ টাকায় বিক্রিয়ের আশা ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ প্রকট আকার ধারণ করায় সরকার যেহেতু লকডাউন দিয়েছে, সে কারণে আমার গরু গুলো এই দামে বিক্রয় করার জন্য কোনো ক্রেতা পাব কি না, সেটা নিয়ে হতাশায় আছি।’
মুল্লিকপুর মধ্যপাড়া গ্রামের অন্য এক খামার মালিক আবদুল খালেক বলেন, ‘এবার কপালে যে কী আছে তা বুঝতে পারতেছি না। ঈদ ঘনিয়ে আসছে, এখন পর্যন্ত খামারে ব্যাপারী আসলও চাহিদা মত গরুর দাম বলছেন না। গরু বিক্রি করতে পারব কি না, সেই দুশ্চিন্তায় আছি। গরু তো আর বিনা খরচে লালন-পালন করা যায় না। আমার ৬টা গরু পালন করতে বহু খরচ হয়েছে। আশা নিয়ে গরু পালন করতেছি। এবার যথাযথ মূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে ভয়াবহ বিপদে পড়ে যাব।’
মোহনপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে এবার বড় খামারিরা ৫০ শতাংশ পশু দেশের বড় বড় হাটে তুলতে পারবেন না। আর ছোট খামারিরা তো অর্থসংকটে পড়ে আগেই স্বল্প দামে পশু বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেক ছোট খামারির কাছে গরুই নেই। ভারতীয় গরুও আসছে না। কাজেই এবার ক্রেতাও কম, গরুও কম। এতে বাজারে ভারসাম্য থাকতে পারে। কিন্তু হাটে গরুর সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে বাংলাদেশের খামারিরা বিপদে পড়বেন। কারণ, গত তিন মাসে খামারিদের খাবার কিনতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পশুর হাটের সংখ্যা কমে যেতে পারে। তবে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা চালু করেছি। ফেসবুক পেজে গিয়ে “ মোহনপুর অনলাইন কোরবানির হাট” নামে সার্চ করে অনলাইনে পশু বেচা-কেনা করা যাবে।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সানওয়ার হোসেন বলেন, ‘এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায় আগে জনস্বার্থের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে হাটের সংখ্যা কমাতে হতে পারে, প্রয়োজন হলে আবার বাড়ানো হবে। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব আয় মূল বিষয় নয়, মুখ্য বিষয় হলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তাই আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য দেব।