বড়াইগ্রামের প্রান্তিক খামারিরা ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে করোনা পরিস্থিতিতে পালন করা গবাদি পশুর বিক্রি নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন। লকডাউনে পশুর হাট বন্ধ থাকায় এগুলো বিক্রি নিয়েতো সংশয় রয়েছেই, পাশাপাশি উপযুক্ত দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবী, চলমান পরিস্থিতিতে গবাদী পশু বিক্রির জন্য ‘ই-হাট বড়াইগ্রাম’ নামে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম চালু করা হয়েছে। এতে খামারীদের গরু বিক্রিতে কিছুটা সহায়ক হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সুত্রে জানা যায়, এবার কোরবানীর জন্য উপজেলায় পাঁচ হাজার ৬১৩ টি খামারে মোট ৩৭ হাজার ৫৮৯ টি গবাদী পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৫৪৮টি গরু, ৫৬১টি মহিষ, ১৭ হাজার ১৪২টি ছাগল ও ৩৩৮ টি ভেড়া রয়েছে। এ বছর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার পশু কোরবানি হবে বলে আশা করছে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ। অবশিষ্ট প্রায় ১৪ হাজার উদ্বৃত্ত পশু উপজেলার বাইরে বিক্রি করতে হবে।
ঈদের বাকি আর মাত্র ১০/১১ দিন। অথচ অন্যান্য বছরের মতো এখন পর্যন্ত দেখা মিলছে না ব্যাপারীদের। কোরবানীযোগ্য পশুপালনকারী খামারীদের প্রত্যাশা ছিল, ঈদের আগে হাটে পশু বিক্রি করে মুনাফা করবেন। কিন্তু তাদের জন্য ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে মহামারী করোনা আর দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন।
খামারীরা জানান, প্রতি বছর কোরবানির হাট শুরুর মাস খানেক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা এসে খামারে ঘুরে ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এবার সেভাবে ব্যাপারীরা গরু কিনতে আসছেন না। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের চেয়ে এবার গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি হওয়ায় গবাদী পশু পালনের ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বড়াইগ্রামসহ আশেপাশের সব উপজেলায় পশুহাট বন্ধ রয়েছে। ফলে ভাল দামতো দুরের কথা, গরু বিক্রি নিয়েই শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
বনপাড়া ফজলীতলা এলাকার গোল্ডেন ড্রিমস খামারের পরিচালক শেখ হাবিবুল্লাহ বলেন, আমাদের খামারে কোরবানীযোগ্য ২৪টি গরু রয়েছে। হাট বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত কোন গরু বিক্রি হয়নি। তবে অনলাইনে প্লাটফর্মে দেখে অনেকেই দরদাম করছেন।
রয়না মহল্লার খামারী সোলায়মান হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি আর ন্যায্যদাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। প্রতিদিন একটি গরুর জন্য ১২৫-১৫০ টাকা খরচ হয়। পশু বিক্রি না করতে পারলে সাত-আটমাস ধরে খাটানো টাকার অনেকটাই লোকসানে যাবে। ’
ধামানিয়াপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মনসুর রহমান বলেন, করোনায় ঢাকাসহ দেশের পশুর হাট প্রায় বন্ধ, ঈদের আগ মুহুর্তে হাট বসার সম্ভাবনাও কম। এ কারণে বড় ব্যাপারীরা না আসায় গবাদি পশু কেনাবেচা প্রায় বন্ধই বলা চলে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জ্বল কুমার কুন্ডু বলেন, হাট বন্ধ থাকায় খামারীরা বিপাকে রয়েছেন। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘ই-হাট বড়াইগ্রাম’ নামে একটি অনলাইন হাট চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া সাত ইউনিয়নে আমাদের নিয়োগপ্রাপ্ত এলএসপিরা পশুর ছবি তুলে খামারের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছেন। এভাবে আমরা খামারীদের গবাদী পশু বিক্রিতে সহায়তা করছি।