কুড়িগ্রামের তিস্তা ও ব্রক্ষপুত্র নদের দু’কূলে জিও টিউব ব্যবহার করায় ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে নদীর পাড়ের মানুষজন।
তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন ঠেকাতে প্রথমবারের মতো বালু ভর্তি জিও টিউবের ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিশেষ করে তিস্তার মেগা প্রকল্প না থাকায় স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষা কাজ নেই। তাই ১৮টি স্পটে ভাঙ্গন বিধবংসী রুপ নিয়েছিল। ভাঙনের রাশ টানতে তাই জিও ব্যাগের পাশাপাশি জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। কম খরচ ও বেশি টেকসইয়ের কারণে এই টিউব নিয়ে আশাবাদী প্রকৌশলী ও স্থানীয় মানুষ।
বিশালাকারের এই টিউব তীব্র স্রােতে আর ঘূর্ণির সঙ্গে লড়াই করছে। ভাঙ্গন প্রবণ এলাকার তলদেশ থেকে উপরিভাগ পর্যন্ত শক্ত আবরণের মাধ্যমে ঠেকিয়ে দিচ্ছে ভাঙন। ইতোমধ্যে তিস্তা নদীর পারে বুড়িরহাট স্পারসহ কয়েকটি এলাকার তীব্র ভাঙন রোধ করেছে এই টিউব।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমের আগে ভাঙন প্রবণ ২৫টি স্পট চিহ্নিত করা হয়। এসব স্পটের কয়েকটিতে ভাঙন প্রতিরোধে তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প চলমান থাকলেও জরুরি পরিস্থিতিতে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করছে পাউবো। ২৫০-৩০০ কেজি ওজনের বালু ভর্তি জিও ব্যাগ স্রােতের সঙ্গে সব সময় লড়াই করতে পারে না। পানিতে ভেসে যায় অনেক ব্যাগ। গোড়ায় ধ্বস নামে। তাই ভাঙন প্রতিরোধ কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে এ বছর জিও ব্যাগের পাশাপাশি ৩ হাজার ৫শ থেকে ৪ হাজার কেজি ওজনের জিও টিউবের ব্যবহার করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মিলছে সাফল্যও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজারহাটের তিস্তাপারের বুড়িরহাট স্পারটির কক্রিটের অংশটি অক্ষত থাকলেও মাটির অংশের ১৫০ মিটার গত বছর ভেঙে যায়। জিও ব্যাগ দিয়ে মেরামতের পর এবছর পুণরায় তা ভেঙে যায়। পরে এখানে জিও টিউব ফেলার কারণে স্পারটি অক্ষত থাকার পাশাপাশি স্রােতের গতিও দ্রুত সরে গেছে। একইভাবে জিও টিউব দিয়ে তিস্তার নাগরাকুড়া টি হেড গ্রোয়েনটির ধ্বস ঠেকিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে। ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই গ্রোয়েনটির কিছু অংশে গত বছর ধ্বস নেমেছিল। এ ছাড়া সদর উপজেলার সারডোব, উলিপুরের গোড়াইপিয়ার, কাশিমবাজারসহ তিস্তা, ধরলার ১২টি স্পটে ব্যবহার করা হচ্ছে এই নতুন প্রযুক্তির এই টিউব।
বুড়িরহাট এলাকার বাসিন্দা জামসেদ আলী জানান, একটা সময়ে তিস্তাার ভাঙন থেকে বুড়িরহাট স্পারটি রক্ষা করা কঠিন হয়ে হয়েছিল। কিন্তু জিও টিউব ফেলার পর নদীর স্রােত সরে যাওয়ায় স্পারটির ক্ষতির আর কোন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা জানান, জিও টিউবে প্রেসার দিয়ে বালু ভরাতে হয়। এজন্য ব্রহ্মপুত্র থেকে আনা একাধিক বালুর ট্রলার ব্যবহার করা হচ্ছে। গাইবান্ধা থেকে আনা হয়েছে প্রশিক্ষিত শ্রমিক। ওজন বেশি হওয়ায় জিও টিউব পানির গভীরে গিয়ে খনন বাঁধাগ্রস্থ করে। ফলে ভাঙন থেমে যায়। সারিবদ্ধ টিউবের উপর ঢেউ আছরে পরলেও কোন ক্ষতি হয়না।
মঙ্গলবার (১৩জুলাই)কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, জিও টিউব দিয়ে কয়েকটি স্পটে ভাঙন ঠেকানো গেছে। এই প্রযুক্তি কুড়িগ্রামের নদণ্ডনদীর ভাঙন প্রতিরোধে আশাব্যঞ্জক হয়ে উঠেছে। এতে খরচ কম। অথচ টেকসই বেশি। বন্যা পরবর্তি সময়ে স্থানীয় জনগন রক্ষণাবেক্ষণ করলে দীর্ঘ সময় ধরে জনপদ রক্ষা করবে এই টিউব।