এক সময় সংসারে গৃহস্থালীর পাশাপাশি বন বাদারে ঘুরে খড়ি এবং গাছে পাতা সংগ্রহ ছিল আদিবাসী নারীদের প্রধান কাজ। কিন্তু এখন পাল্টে গেছে সেই চিত্র। পুরুষদের পাশাপাশি আদিবাসী নারীরা এখন দেশের উন্নয়নে বলিষ্ট ভূমিকা রাখছে। তাদের হাত ধরে ঘুরছে পরিবারের অর্থনীতির চাকা। অভারের সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।
জানা গেছে, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌর সভায় আদিবাসী রয়েছে আনুমানিক ২১হাজার। এদের মধ্যে ১১হাজার পুরুষ এবং ১০হাজার নারী। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা এখন কৃষি, কুটির শিল্প এবং উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ ভূমিকার রাখছে। লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও এগিয়েছে গেছে আদিবাসী মেয়েরা।
এ ব্যাপারে নারী কৃষি শ্রমিক আরতি সরেন জানান, ৮আদিবাসী নারী মিলে একটি কৃষি শ্রমিকের দল তৈরী করেছি। আমরা ৮জন মিলে বিঘা প্রতি ১৬শত টাকা দরে মাঠে বোরো ধান রোপনের কাজ নিয়েছি। সারা দিনে ৪বিঘা জমিতে বোরা ধানের চারা রোপন করি। এতে থেকে প্রতিদিন মোট আয় হয় ৬৪০০টাকা। কাজ শেষে প্রতিদিন একজন নারীর আয় হয় ৮০০টাকা। উপার্জন বাড়ার কারণে ছেলে-মেয়েদের কাজে না দিয়ে স্কুলে দিয়েছি।
একই কথা জানিয়ে মাধবী মার্ডী জানান, দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতিতে একজনের আয়ে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। তাই বাধ্য হয়ে মাঠে কাজে এসেছি। এখন সংসারে আর অভাব নাই। বরং প্রতিদিনের আয়ে সংসারে চাল-ডাল কিনে কিছু টাকা থেকে যায়। সেই টাকা সন্তানদের জন্য সঞ্চয় করি।
আদিবাসী নারী পরিষদের সদস্যা রানী হাসদা বলেন, শুধু কৃষিতে নয় সব ধরণের কর্মক্ষেত্রে আমাদের আদিবাসী নারীরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজের লোকজনের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে। উন্নয়নে অবদান রাখতে আদিবাসী নারীদের সুযোগ করে দিতে হতে। কারণ কোন একটি গোষ্ঠীকে পিছনে ফেলে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন কাজ।
বীরগঞ্জ উপজেলা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি বাজুন বেসরা বলেন, আদিবাসী নারীদের এগিয়ে নিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষনের কর্মসংস্থান তৈরী করতে হবে। কুটির শিল্প তৈরীতে প্রশিক্ষণ শেষে আর্থিক সহযোগিতা এবং ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আদিবাসী নারীদের শিক্ষা ব্যয়ভার বহনে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল কাদের বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূল¯্রােতধারায় নিয়ে আসতে কাজ করছে সরকার। উন্নয়নের ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে আদিবাসী নারীদের বিভিন্ন ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পশু পালন প্রশিক্ষণ দিয়ে গরু এবং ঘর তৈরীর সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে। আদিবাসী ছাত্রীদের উপবৃত্তি এবং বাইসাইকেল প্রদান করা হয়েছে। তাদের অনেক পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার প্রদান করা হয়েছে।