দীর্ঘদিন বাড়িতে লালন-পালন করে বড় করে তা হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দেশী জাতের ২২টি গরু। তবে সেগুলো পাচার হয়ে আসা ভারতীয় গরু দেখিয়ে ট্রাক থেকে উদ্ধার করা হয়। আর গরুগুলো জব্দ করা হলেও ট্রাকে থাকা ৬ ব্যক্তিকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এরপর ২৪ ঘন্টা না পেরুতেই কোন প্রকার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই রাজশাহী কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাড়াহুড়ো করে নাম মাত্র মূল্যে নিলামে তুলে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে স্থানীয় কাস্টমস কমিশনারের মুঠোফোনে কল করে ও এসএমএস পাঠিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
জব্দকৃত গরুগুলো দেশী দাবি করে ২২টি গরুর মধ্যে থাকা ৫টি গরুর মালিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার দুই নম্বর বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সদস্য সাদিকুল ইসলাম জানান, এসব গরু তারা নিজেদের বাড়িতে লালন-পালন করেছেন। তবে কিছু গরু এলাকার দরিদ্র পরিবারের কাছে আধি (চুক্তিভিত্তিক বর্গা) দিয়ে বড় করেছেন। আর আমি সত্য বলছি কী না তা এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জানতে পারবেন।
সাদিকুল ইসলাম জানান, গত বুধবার দুপুরে তিনিসহ ৪ জন ওই ২২টি গরু এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ রাজশাহী সিটি হাটে সুবিধাজনক দাম পেলে বিক্রির জন্য প্রথমত মনস্থির করে ট্রাকযোগে আসছিলাম। এখানে ভাল দাম না পেলে চট্রোগ্রামের বিবির হাটে নিয়ে যেতাম। কিন্তু পথিমধ্যে দুপুর আনুমানিক ১ টার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ির বিজিবি চেকপোস্টের কাছে তাদের ট্রাক থামিয়ে গরুগুলোর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হয়। এ সময় ট্রাকের চালক ও হেলপারসহ উপস্থিত ছিলেন ৬ জন। তখন কাগজপত্র দেখানোর পর তাদের কাছে কিছু টাকা দাবি করলে দেশী গরুর জন্য কেন ঘুষ দিতে হবে বলে তারা অন্যায় দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর সাদিকুল টাকা না দিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের পরিচয় পর্যন্ত তুলে ধরেন।
কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি উল্লেখ করে ইউপি সদস্য সাদিকুল বলেন, তাদের অন্যায় আবদার না মানার কারণে উল্টো আমাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে ট্রাকের সবগুলো গরু এবং অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করে। এ সময় প্রশ্ন ছুড়ে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, যদি গরুগুলো ভারতীয় আমদানীকৃতই হয় তাহলে আমাদের কাউকেই কেন গ্রেফতার করা হয়নি।
তিনি বলেন, জব্দকৃত গরুগুলো ফেরৎ নেওয়ার উদ্যেশ্যে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কাস্টমস অফিস ঘুরে নিজেদের গরুর প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র দেখিয়েও কোন লাভ হয়নি। এই গরুগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য ২০ থেকে ২৪ লাখ টাকা দাবি করে সাদিকুল বলেন, বুধবার দুপুরে গরুগুলো ধরার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তা নিলামে তোলার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাড়াহুড়ো শুরু করে। এরপর নিলামের জন্য কোন প্রকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশও করা হয়নি। বিধিবহির্ভূতভাবে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর টিবি পুকুরের মোড়ের কাছে অবস্থিত কাস্টমস অফিসের গুদামে মাত্র সাড়ে ৮ লাখ টাকায় গরুগুলো নিলামের নামে স্থানীয় যুবক রুবেলের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। সে সময় অন্য কোন ব্যক্তি যেন নিলামে অংশগ্রহণ না করতে পারে সেজন্য স্থানীয় প্রায় ২০০ জন যুবক গুদামের চতুর দিক ঘিরে অবস্থান করছিল। শুধু তাই নয়, নিলামের সময় কাস্টমস অফিসের কোন ম্যাজিস্ট্রেট বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে গিয়ে নিজেকে কাস্টমস অফিসের কর্মচারী দাবি করা জহিরের কাছে এই নিলামের কর্মকর্তার নাম জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে টেবিলে থাকা টাকা দেখিয়ে সাংবাদিককে অফিস কক্ষ ত্যাগ করতে বলেন। পরে অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে কাস্টমস অফিসের কমিশনার লুৎফর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে ও এসএমএস পাঠিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।